পরপর চার গ্লাস পানি খেলেন। কাস্টমস হলে হাঁটাহাঁটি। আরও পানি পান। অস্ত্রোপচারের ভয়। এত সব ধাপ পার হয়ে অবশেষে শৌচাগারে যাওয়া। একে একে মলদ্বারে বিশেষ কায়দার লুকিয়ে রাখা ছয়টি সোনার বার বের করলেন বিমানযাত্রী নূর আলম। সেগুলো হাতে করে টেবিলে রেখে শুল্ক কর্মকর্তাদের বললেন, ‘এই নিন আপনার রাষ্ট্রীয় সম্পদ।’এই সোনার বারগুলো বিশেষ কায়দায় শরীরের ভেতর লুকিয়ে এনেছিলেন বিমানযাত্রী নূর আলম।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন মালয়েশিয়া থেকে ওডি ১৬২ উড়োজাহাজে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন নূর আলম। ছয় নম্বর বেল্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হওয়ার সময় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নজরে পড়েন। প্রথমে সোনা লুকিয়ে আনার কথা অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। হুমকিও দেন। পরে বুঝতে পারেন উপায় নেই।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি বহুবার বিদেশ সফর করেছেন। পেশার সঙ্গে এই ভ্রমণ বেমানান। গত পাঁচ মাসে তিনি ছয়বার বিদেশ গেছেন।
বারবার পানি পান করে ও হাঁটাহাঁটি করার পর অবশেষে বের হলো সোনার বার। ছবি: কাস্টমসের সৌজন্যেজিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নূর আলম স্বীকার করেন, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি মলদ্বারে বিশেষভাবে ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার বারগুলো লুকিয়ে আনেন। সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে সেগুলো বের করার জন্য নূর আলমকে চাপ দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের ভয় দেখানো হয়। শরীরের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুকানো আছে—এ কথাও বোঝানো হয়। একপর্যায়ে রাজি হন নূর আলম।
প্রচুর পানি পান ও হাঁটাহাঁটি করিয়ে শৌচাগারে নেওয়া হলো নূর আলমকে। সেখানেও সঙ্গে দুই গোয়েন্দা। এক এক করে ছয়টি সোনার বার শরীর থেকে বের করলেন তিনি। নিজেই হাতে করে আনলেন, রাখলেন টেবিলে। শুল্ক কর্মকর্তাদের বললেন, ‘এই নিন আপনার রাষ্ট্রীয় সম্পদ।’
ঘর্মাক্ত নূর আলম এরপর শুয়ে পড়লেন। জুস ও দুধ পান করিয়ে সুস্থ করার পর ব্যাগে তল্লাশি চলল। সেখানে পাওয়া গেল আরও ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার চেইন।
শুল্ক বিভাগের ভাষ্যমতে, নূর আলমের কাছ থেকে পাওয়া মোট সোনার পরিমাণ ৭০০ গ্রাম। আনুমানিক দাম প্রায় ৩০ লাখ টাকা। নূরের কাছ থেকে ১০০০ এমএল যৌন উত্তেজক জেলও জব্দ করা হয়। নূরের বাড়ি খুলনায়। তাঁকে জেলহাজতে রাখা হয়েছে।
আরও খবর