আকাশ থেকে পড়বে টাকা

2016_05_14_17_16_54_Vzg9NEJKvEWpIz3mPkyZCCCh8ZBckv_originalইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনে এক দুঃসাহসিক সিদ্ধান্তের দিকে আগাচ্ছে ওই অঞ্চলের ব্যাংক মালিকরা। মন্দা থেকে মুক্তির জন্য নানান উদ্যোগ ব্যর্থ হবার পর শেষমেষ অর্থ বিক্রেন্দ্রিকরণের চিন্তা করছে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলো। আর এই বিকেন্দ্রিকরণের প্রেক্ষাপট হিসেবে হেলিকপ্টারে করে জনগণের উদ্দেশ্যে টাকা ছড়ানোও হতে পারে আকাশ থেকে। অথবা, মুদ্রাস্ফিতীর কারণে যে ছাপাকৃত নগদ অর্থ জমছে তা প্রত্যেক নাগরিককে হাতে হাতে বণ্টনও করে দেয়া হতে পারে।

হেলিকপ্টারে করে টাকা বিলিয়ে দেয়ার প্রস্তাবনা আসলেও এখনও এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে বিকল্প প্রস্তাবনা হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রত্যেক নাগরিককে তাদের ব্যাংকে ৫০০ পাউন্ড করে দিয়ে নগদ অর্থের পরিমাণ কমানো যেতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটির তত্ত্বাবধান করতে পারে খোদ কেন্দ্রিয় ব্যাংক। এখানে উল্লেখ্য যে, যদি যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রিয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নেয় তবে প্রত্যেক নাগরিককে দেয়া অর্থ হবে মূলত নাগরিকের কাছে ব্যাংকের রাখা আমানত।

সরকারগুলো নতুন রাস্তা এবং রেলওয়ে নির্মানের অর্থায়ন হিসেবে ব্যবহার করছে বন্ডগুলোকে। অর্থখাতে বন্ড ব্যবহার করার কারণে নগদ অর্থ কেন্দ্রিয় ব্যাংকে জমে যাচ্ছে এবং পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বন্ডের মেয়াদ শেষ না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত নগদ তরল অর্থ বাজারে আনা যাচ্ছে না। যুক্তরাজ্যের ফিনান্স রেগুল্যেটর কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাডায়ান টার্নার হেলিকপ্টার দিয়ে অর্থ ছড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করেছেন এবং বিশ্বব্যাপী ঋণগ্রস্ত অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতায় আনার জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

গত ১১ মে লন্ডনে অনুষ্ঠিত ট্রান্সফর্মিং ফিনান্স নামের একটি সম্মেলনে লর্ড টার্নার আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটা সঙ্কোচজনক ফাঁদে আটকে গিয়েছি যে আমাদেরকে অর্থ বিতরণের জন্য হেলিকপ্টার ডাকতে হচ্ছে।’ অবশ্য এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার না করে ‘পিপলস কোয়ান্টিটিভ ইজিং’ পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন জেরমি করবিন। গত মার্চ মাসেই ইউরোপিয়ান কেন্দ্রিয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মারিও দ্রাঘি হেলিকপ্টার থেকে টাকা বিলানোর পরিকল্পনাকে খুবই আকর্ষণীয় ধারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

মার্গারেট থ্যাচারের প্রিয় ফ্রি-মার্কেট বা মুক্তবাজার অর্থনীতিবিদ হলেন মিল্টন ফ্রেডম্যান। ১৯৬৯ সালে এই অর্থনীতিবিদ তার লেখায় বলে গিয়েছিলেন যে, যদি কেন্দ্রিয় ব্যাংকগুলো অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রন করতে অসমর্থ হয় এবং অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দের দিকে যায়, তাহলে সর্বশেষ ছাপাকৃত অর্থ হেলিকপ্টারে করে বিলিয়ে দেয়াই হবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, এতে অর্থনৈতিক সামঞ্জস্যতা আসবে। তবে বর্তমান সময়ের অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, হেলিকপ্টার থেকে অর্থ ছড়িয়ে দিলে মুদ্রাস্ফিতীতে তার প্রভাব হবে খুব সামান্য। কারণ অর্থনৈতিক অবস্থা ইতোমধ্যেই কুমারীত্ব মোচন করেছে, অর্থাৎ পুঁজিবাদ তার যৌবন কাল অতিক্রান্ত করে ফেলেছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.