বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাপানী নারী মিদুরি‘র আর্তনাদ

meduri-2জাপান থেকে, বিশেষ প্রতিনিধি ঃ এক বছরেও প্রতারক বাংলাদেশী স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা সংগ্রহ করে দিতে পারেনি জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। জাপানী নারী মিদুরী ইমোরা তার স্বামী মাসুমুল হাসানের দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা সংগ্রহ করে দিতে গত বছর ১ ডিসেম্বর জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন জানান। দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশের ৪টি মন্ত্রনালয়কে চিঠি দেয়। কিন্তু অভিযোগ গত বছরে বাংলাদেশের এই ৪টি মন্ত্রনালয় মাসুমুল হাসানের দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা সংগ্রহ করে দিতে পারেনি।  এদিকে স্বামীর কাবিন নামা সংগ্রহ করে দিতে দুতাবাসে আবেদন করায় ক্ষুব্দ মাসুমুল তার জাপানী স্ত্রী মিদুরীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। তাকে বেদম মারধরসহ শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। তার বাসা থেকে বিপুল পরিমান অর্থ ও সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। মিদুরী বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করেছেন। পুলিশ এই ঘটনার পর থেকে মাসুমুলকে করা নজরদারিতে রেখেছেন।
এদিকে প্রাণনাশের হুমকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা ও বিয়ের যাবতীয় নথিপত্র সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য মিদুরী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।  প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মিদুরী বলেন, তিনি একজন নারী। একজন নারী হয়ে তিনি অপর একজন নারীর কষ্ট-বেদন বুঝতে পারবেন। তার স্বামী মাসুমুল একজন ভন্ড-প্রতারক। সে তার সঙ্গে প্রতারণা ও অভিনয় করেছে। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই প্রতারণার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মাসুমুলের দ্বিতীয় বিয়ের কাবিন নামাসহ অন্যন্যা কাগজপত্র সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। অন্যথা মিদুরী ভন্ড স্বামী মাসুমুলের  বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আÍহত্যা করে গোটা বিশ্বের কাছে এর প্রতিবাদ জানাবেন বলে হুমকী দিয়েছেন।

এর আগে মিদুরী ইমোরা জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে স্বামী মাসুমুল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আকুতি জানিয়েছেন। তার অভিযোগ মাসুমুল হাসান তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাকে না জানিয়ে বাংলাদেশে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তাকে বিয়ে করার ১৬ বছর পর সে এখন তাকে না জানিয়ে বাংলাদেশে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। শুধু বিয়ে করেই খান্ত থাকেননি, এখন সেই দ্বিতীয় স্ত্রীnahid নাহিদ আলোকে জাপানে নিয়ে আসতে ভিসার জন্য তদবির করছেন। মিদুরী ইমোরা জাপানের সাইতামা প্রিপাকচার এলাকার বাসিন্দা। মৃদুরীর অভিযোগ ১৫ বছর আগে তাকে বিয়ে করেন বাংলাদেশী নাগরিক মাসুমুল হাসান। মাসুমুলের বাড়ি পুরনো ঢাকার ফরিদাবাদস্থ ৫৩/৭/২ হরিচরণ রায় সড়কে। এতদিন বিয়ে করে তারা দুজন জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রবাসী নাগরিকদের জাপানের নাগরিকত্ব পেতে হলে জাপানী কোন মেয়েকে বিয়ে করতে হয়। মাসুমুল মিদুরীকে বিয়ে করে জাপানের নাগরীকত্বও নিয়েছেন। জাপানের আইন অনুযায়ী প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটা জেনেও মাসুমুল হাসান বাংলাদেশে এসে গোপনে বিয়ে করেছেন। এজন্য তিনি একবারও  প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেননি। বিয়ের বিষয়টি মাসুমুল হাসান এখনো গোপন রেখেছেন। মিদুরী বলেন, মাসুমুল হাসানের মতো তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদ আলোও একজন অভিযুক্ত। বিয়ের আগে তিনি নাহিদকে টেলিফোনে এই বিয়ে না করার জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন। নাহিদ মিদুরীর এই আকুতি তো শুনেনইনি। উল্টো মিদুরীকে হুমকী দিয়েছে সে যেন মাসুমুলকে ছেড়ে দেয়।

এদিকে মিদুরী‘র অভিযোগ আমলে নিয়ে জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশের ৪ টি মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। গত বছর ১ ডিসেম্বর অ্যাম্বাসীর ফাস্ট সেক্রেটারী বেবী রানী কর্মকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই তথ্য চাওয়া হয়। বাংলাদেশে চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে ডাইরেক্টর জেনারেল (কনসোলার এন্ড ওয়েল ফেয়ার) মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, ডাইরেক্টর জেনারেল ব্যুরো অব ম্যান পাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট এন্ড ট্রেনিং, পিএস টু সেক্রেটারী মিনিস্ট্রি অব ওমেন এন্ড চিলড্রেন অ্যাপেয়ার্স, পিএস টু মিনিস্ট্রি অব এক্সপার্টিজ ওয়েলপেয়ার এন্ড ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট, ঢাকা, পিএস টু সেক্রেটারি মিনিস্ট্রি অব ল জাস্ট্রিজ এন্ড পার্লামেন্টারি অ্যাপয়োর্স ঢাকা।

japanটোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে লেখা চিঠিতে জাপানি নাগরিক মিদুরী তার অভিযোগে আরো জানিয়েছে তার স্বামী মাসুমুল হাসানের বিরুদ্ধে তিনি জাপানী মেরিজ রেজিস্ট্রেশন আইনে মামলা করতে চান। যার কারণে তিনি মিশনের কাছে তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করার কাবিন নামা সংগ্রহ করে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মৃদুরী আরো অভিযোগ করেছেন তার স্বামীর পাসপোর্ট যেটি ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ থেকে ইস্যু করা হয়েছে সেখানে স্পাউস (স্ত্রী) নামের পাশে নট অ্যাপলিকেবল (এনএ) লেখা রয়েছে। এটি পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী মারাত্বক দন্ডনীয় অপরাধ। কারণ মাসুমুল হাসান তাকে জাপানের রেজিস্ট্রেশন অব ম্যারিজ আইনে বিয়ে করেছেন। আইন অনুযায়ী সে তার স্পাউস (স্ত্রী)। পাসপোর্ট করার সময় সে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। মাসুমুল পাসপোর্টে আরো ভুল তথ্য দিয়েছে সেটি হল ইমারজেন্সি কন্ট্রাক এর ঘরে তার নিজের নাম দিয়েছে। অথচ রিলেশন্সসিপ হিসাবে বলেছে বন্ধু। আর ঠিকানা হিসাবে জাপানে মৃদুরীর বাড়ির নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ স্ত্রী হিসাবে মৃদুরীর নাম উল্লেখ না করে সেখানে ‘এনএ’ লিখেছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.