বিমানের রাডার কেনার উদ্যোগ ফের বাধা হতে পারে সিন্ডিকেট

الرادارات الايرانية

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৩৩ বছরের পুরনো রাডার দিয়ে চলছে বিমান চলাচল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান রাডারের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নিরাপদে বিমান চলাচলের বিষয়টি পুরোপুরি রাডারের ওপর নির্ভরশীল হলেও সিএএবি (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) নতুন রাডার কিনতে পারছে না। কারণ নতুন রাডার কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হলেই একটি চক্র আদালতে মামলা করে দেয়। আরেকটি চক্র পুরনো রাডার মেরামতের নামে রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব চক্রের কাছে অনেকটা অসহায় সিএএবি। সে অবস্থায়ই রাডার কিনতে নতুন করে আহ্বান করা দরপত্র বাক্স খোলা হবে আজ বুধবার।

এ প্রসঙ্গে সিএএবির চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী  বলেন, নিরাপদ বিমান চলাচলের স্বার্থে অনেক আগেই অত্যাধুনিক রাডার প্রতিস্থাপন করা উচিত ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এবার আর কোনো জটিলতা বা প্রতিবন্ধকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে নতুন রাডার কেনা হবে। দরপত্র ডাকা হয়েছে। সব কিছু স্বাভাবিক গতিতে চললে আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হবে। সেই চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন মহলের কারসাজিতে সিএএবি নতুন রাডার কিনতে না পরায় পুরনো রাডার দিয়েই কাজ সারতে হচ্ছে। পুরনো রাডার বছর বছর মেরামত করায় খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, মেরামতের টাকার কমিশন বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতেই

একটি সিন্ডিকেট নতুন রাডার কিনতে দিচ্ছে না। সর্বশেষ গত মাসে যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, তা ঠেকানোর জন্যও ওই চক্রটি মামলা করেছিল। তবে আদালত তা আমলে না নিয়ে খারিজ করে দিয়েছেন। এরপর আরেক পক্ষকে দিয়ে ফের মামলা করা হয়। অবশ্য আদালত ওই মামলায় কোনো আদেশ না দেওয়ায় আজ দরপত্র খুলতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার ট্রাফিক সার্ভিল্যান্স সার্ভিসের জন্য স্থাপিত সিভিল এভিয়েশনের রাডারব্যবস্থা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডারের সমন্বয়ে গঠিত। ফরাসি সরকারের অনুদানে ১৯৮৪ সালে প্রাইমারি রাডার এবং ১৯৮৬ সালে সেকেন্ডারি রাডার স্থাপনে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। স্থাপনের সময় এর অ্যান্টেনার ঘূর্ণন ছিল প্রতি মিনিটে ১৫ বার। যন্ত্রাংশ পুরনো হওয়ায় এটি চলমান রাখার স্বার্থে এর ঘূর্ণনসংখ্যা কমিয়ে বর্তমানে প্রতি মিনিটে সাতবার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ১০ বছর ধরে প্রাইমারি রাডারটি বিকল। আপাতত জোড়াতালি দিয়ে সেকেন্ডারি রাডার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। সেটিও সর্বশেষ মেরামত করা হয়েছে চার বছর আগে। বর্তমানে কেবল একটি প্রসেসর দিয়ে সেটি চালানো হচ্ছে। টানা ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার বেশি সেটি কার্যকর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে নিরাপদে বিমান ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটছে। নিরাপত্তার হুমকি রয়েছে।

সিএএবির সিভিল এভিয়েশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সেকেন্ডারি রাডার দিয়ে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এখন নির্ভর করতে হয় উড়োজাহাজের ট্রান্সপন্ডারের ওপর। সেটি নষ্ট থাকলে সংকটে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

গত মাসে সিএএবির রাডারের অবস্থা নিরূপণ-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাডারটির অধিকাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবহার ও মেরামতের অযোগ্য। বর্তমান রাডারটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থ্যালাস বহু আগেই যন্ত্রাংশ তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। ১৯৮৭ সালে চার কোটি ৫৪ লাখ, ১৯৯৪ সালে সাড়ে চার কোটি এবং ২০০৮ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডারের সম্পূর্ণ সিস্টেম হালনাগাদ করা হয়েছে। এর পরও ৩০ বছরের পুরনো মডেলের রাডারটির ঘূর্ণন বাড়ানো ও প্রাইমারি অংশটি সম্পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য করা এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, নতুন রাডার কিনতে বাধা দিয়ে সিএএবির একটি চক্র পুরনো রাডারটি বারবার মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কারসাজি করে। নতুন রাডারের বদলে পুরনো রাডার মেরামতের জন্য ফের দরপত্র আয়োজন করে ওই চক্র। ওই দরপত্রে মেরামত বাবদ ২৩ কোটি টাকা দর প্রস্তাব করে একটি প্রতিষ্ঠান। চক্রটি ভুয়া প্রস্তাবের মাধ্যমে ‘মেসার্স অ্যারোনেস’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানকে বাজার মূল্যের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দামে ২৩ কোটি টাকায় মেরামতকাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া। অথচ পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী, কোনো নতুন যন্ত্রাংশ অবশ্যই বাজার যাচাই এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে কেনার বিধান রয়েছে। কিন্তু সিএএবির চক্রটি সেই বিধান না মেনে মেসার্স অ্যারোনেসকে থ্যালাসের স্থানীয় প্রতিনিধি দেখিয়ে কাজটি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সম্প্রতি তা বাতিল করা হয়। সিএএবির রাডার আপগ্রেডেশন-বিষয়ক কমিটিও বর্তমান রাডারটি পরিবর্তন করে নতুন রাডার স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছে।

সিএএবির চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী বলেন, যারা মামলা করে রাডার বসানোর দরপত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তারা আসলে সিভিল এভিয়েশনের দুশমন। তারা দেশের শত্রু। তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা সিভিল এভিয়েশনের বিরুদ্ধে মামলাও করবে, আবার ব্যবসাও করবে, তা হতে পারে না।

সূত্রঃ কালের কন্ঠ

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.