আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পঞ্চম অংশিদারিত্ব সংলাপ। এবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হতে যাওয়া নিরাপত্তা ইস্যুতেই বেশি প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ।
আর সেই চাপে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অন্যতম দাবি মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি পুনর্বহাল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২৩-২৪ জুন ওয়াশিংটনে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে পঞ্চম অংশীদারিত্ব সংলাপ শুরু হচ্ছে। সংলাপে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। এ সংলাপকে সামনে রেখে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে। ওয়াশিংটন যেসব বিষয়ে আলোচনায় জোর দিতে চায়, তা ইতোমধ্যেই ঢাকাকে অবহিত করা হয়েছে।
এবারের সংলাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সংলাপে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, ঢাকায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ইত্যাদি ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হতে যাচ্ছে।
আর বাংলাদেশ পুরো প্রস্তুতি সেই দিকেই রাখছে। এ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে চারটি সংলাপ অনুষ্টিত হয়েছে। প্রথম অংশিদারিত্ব সংলাপ বাদে প্রতিটি সংলাপেই বাংলাদেশকে চাপের মধ্যে রাখে যুক্তরাষ্ট্র। সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন, কখনোবা নির্বাচনে ঘটে যাওয়া অনিয়ম তদন্তের চাপ, ছিল শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত, শ্রমিকের নিরাপদ কর্ম পরিবেশ বা ভবন নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে চাপও।
আর এবার গুরুত্ব পাচ্ছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধসহ দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ইস্যু।
সূত্র জানায়, এবারের সংলাপে সাইবার নিরাপত্তা ও আগাম তথ্য বিনিময়কে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে প্রতিবারের মত মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার এবং দেশটির বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধাও আলোচনায় রাখা হয়েছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে এক প্রকার নিরাশায় রয়েছেন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করে আসছে, পোশাক শিল্পের উন্নয়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সব শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
তারপরও জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি রাজনৈতিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করে আসছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। এবারের সংলাপে জিএসপি সুবিধা নিয়ে আলোচনা তুলবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জিএসপি ইস্যু বাংলাদেশ তুললেও সে বিষয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। মার্কিন অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী, সকল শর্ত পূরণ করলেও তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শর্ত এখনো পূরণ হয়নি। এক্ষেত্রে বিষয়টি হতাশার জন্ম দিয়েছে। ফলে বিষয়টি এবারের বৈঠকে খুব একটা গুরুত্ব পচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত হতে যাওয়া নিরাপত্তা ইস্যু নিয়েই বেশি প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিজেদের নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে। তবে তাদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে সেসব অবহিত করবে ঢাকা। এছাড়া আইএস ইস্যুতে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে তথ্য বিনিময় করতে চায় বাংলাদেশ। কেননা আইএস ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার কথা বলে এলেও সরকারকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
আইএস ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আগাম তথ্য পাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আনতে চায় ঢাকা।
এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে কোনো সরকারেরই প্রথম কাজ। তাই আসন্ন অংশীদারিত্ব সংলাপে এটি শীর্ষ এজেন্ডা হিসেবে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, এ দেশের আইন অনুযায়ী বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র বহন করতে পারেন না। তাই যুক্তরাষ্ট্র বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে যতটা সম্ভব শক্তিশালী দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে তার কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের পুলিশের অসাধারণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্র বহনের সুযোগ যাচাই করতে চায়।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শ্রম ও জনশক্তি, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই সংলাপে অংশ নেবেন। এবারের সংলাপে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, খাদ্য নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ও আলোচনায় আসতে পারে।
বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় অংশীদারিত্ব সংলাপ ২০১৪ সালের ২৮-২৯ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালের ২৬ ও ২৭ মে দুদেশের মধ্যকার দ্বিতীয় অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রথম অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর।