‘আমার বাচ্চা অসুস্থ, প্লিজ আমাকে যেতে দিন’- ওসমানী বিমানবন্দরে নারীর আকুতি

মায়িশা হোসাইন, সিলেট থেকে : ‘আমার বাচ্চা অসুস্থ, আমাকে প্লিজ যেতে দিন’ ‘কেউ আমাকে একটু সাহায্য করুন’- সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কান্নারত এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারীর এই আকুতি কেউ শোনেনি।
বুধবার (২৮ জুলাই) সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঘটনা এটি।

সেদিন বিমান কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী আচরণের কারণে ফ্লাইট মিস করে এভাবেই চিৎকার করে কাঁদেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারী জামিলা চৌধুরী।

জানা যায়, গত ২৮ জুলাই সিলেট থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাইটের বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এর যাত্রী ছিলেন ভুক্তভোগী প্রবাসী জামিলা চৌধুরী।
নির্ধারিত সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে পৌঁছালে দায়িত্বরত কর্মকর্তা তার কাছে লোকেটর ফর্ম চান।
তখন নিজ মোবাইলে লোকেটর ফর্মটি দেখালেও প্রিন্ট কপি চান ওই কর্মকর্তা।
এখান থেকেই মূলত ঘটনার শুরু।
জামিলা চৌধুরীর ভাষ্যমতে বারকোডযুক্ত লোকেটর ফর্মের প্রিন্ট কপি বাধ্যতামূলক হতে পারে না যেখানে সবকিছুই বর্তমানে ডিজিটালি চলছে।
তবে বিমান কর্মকর্তা সেটি মানতে নারাজ।
খানিকক্ষণ বাক বিতন্ডার পর জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরের নির্ধারিত কাউন্টারে লোকেটর ফর্ম প্রিন্ট করার জন্য যান।
কিন্তু সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকায় তা প্রিন্ট করতে পারেন নি।
এখানে দুই দফায় বেশ খানিকটা সময় চলে যায় বলে জানান জামিলা চৌধুরী।

জামিলা চৌধুরী জানান, ‘এরপর আমার লাগেজে অতিরিক্ত মালামালের কারণে আমার কাছে অনৈতিকভাবে টাকা দাবী করেন সেই কর্মকর্তা।
আমি তা দিতে অপারগতা জানাই এবং বলি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি লাগেজ নিয়ে আমাকে বোর্ডিং পাস দেবার জন্য।
কিন্তু সেই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে আমার উপর পাসপোর্ট ছুঁড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। আমাকে বোর্ডিং পাস না দিয়েই লাইন থেকে বের করে দেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি উপস্থিত অন্যন্য কর্মকর্তাকেও অনেক অনুরোধ করি, কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করেনি।’
এসময় জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরে নিজের অভিযোগ জানাতে চাইলেও তার অভিযোগ কেউ গ্রহণ করেনি।

বিমানবন্দরে থাকা অবস্থায় নিজের মোবাইলে কয়েকটি ভিডিও করেন মিসেস চৌধুরী।
একটি ভিডিওতে দেখা যায় কর্তব্যরত বিমান কর্মকর্তা বলছেন ‘আমাদের মধ্যে হিউমিনিটি (মানবতাবোধ) নেই।
আপনি ম্যানেজারের কাছে যান, আমরা আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না।’ আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়- সাহায্য চাইতে গেলে এক কর্মকর্তা লাগেজ বেল্টের উপর দিয়ে দিয়ে লাফিয়ে পালাচ্ছেন।

তবে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বিমান কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ফ্লাইট ধরতে না পারার কারণ হিসেবে বলছেন অতিরিক্ত ওজনের লাগেজের কথা।

সিলেট বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াত বলেন, ওই যাত্রীর সাথে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি মালামাল বেশি ছিল।
প্রতি কেজি ২ হাজার ৬১১ টাকা হিসেবে এক লাখ টাকার উপরে পরিশোধ করার কথা।
কিন্তু তিনি প্রথমে ওভার ওয়েটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হননি।
পরে যখন তিনি অতিরিক্ত লাগেজ ছেড়ে যেতে রাজি হন তখন কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে।

বিমান বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রতি কেজি অতিরিক্ত ওজনের জন্য ১০ পাউন্ড ফি উল্লেখ থাকার কথা বললে তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে কি আছে জানি না, তবে আমাদের এটাই ধার্য্য করা আছে এবং তা নিয়মমাফিকই নেয়া হচ্ছে।’

ওমর হায়াত আরো বলেন, নির্ধারিত সময়ের একঘন্টা আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাউন্টার বন্ধ করতে হয়।
কিন্তু ওই যাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার লাগেজের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই তাকে রেখেই বিমান ছাড়তে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে লন্ডনে সন্তানদের রেখে দেশে এসেছিলেন জামিলা চৌধুরী।
বুধবার বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এ তার যুক্তরাজ্য ফেরার কথা।
সেখানে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেলও বুকিং করা ছিল।
কিন্তু নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে না পেরে মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জামিলা চৌধুরী এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চান।

সূত্রঃ সিলেট ভয়েস ডট কম

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.