ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে গণভোটে যুক্তরাজ্যের জনগণের রায় ইউরোপ মহাদেশের অন্যদেশগুলোকেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছে। ইতিমধ্যে নতুন করে অনেক দেশেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে দাবি উঠেছে। ইইউতে থাকা, না থাকা বিষয়ে এরইমধ্যে গণভোটের দাবি তুলেছে নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, সুইডেন এবং ফ্রান্সের রক্ষণশীল এবং অভিবাসন-বিরোধী দলগুলো।
ইইউতে থাকা, না থাকা বিষয়ে একটি গণভোট আয়োজনে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইতালির রক্ষণশীল দল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট। এছাড়া ইতালির আরেক রক্ষণশীল দল নর্দার্ন লীগের নেতা মাত্তেও সালভিনি গণভোটের ফলাফলে ব্রিটিশ জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘এবার আমাদের পালা।’ ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্টের উপনেতা ফ্লোরিয়ান ফিলিপটও একই দাবি তুলেছেন।
ন্যাশনাল ফ্রন্ট দীর্ঘদিন ধরে ইইউ থেকে ফ্রান্সের বেরিয়ে আসার দাবি করছে। গত নির্বাচনে দলটি নিজেদের অবস্থান সংহত করেছে। ব্রিটেনের গণভোটের ফলাফল প্রকাশের পর ন্যাশনাল ফ্রন্ট আবারো ইইউ ছাড়ার দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। মেরি ল পেন বলেছেন, ইইউতে থাকবে কি থাকবে না- ফরাসি নাগরিকদের অবশ্যই তা বেছে নেয়ার অধিকার আছে।
২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে মেরি ল পেন জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছেন। গত শুক্রবার ভিয়েনায় ইউরোপের রক্ষণশীল রাজনীতিকদের এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, ইইউ ছাড়তে চাওয়ার পেছনে ইংরেজদের চেয়ে ফরাসিদের এক হাজারটি কারণ বেশি রয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের অভিবাসনবিরোধী রাজনীতিবিদ ও ডাচ ফ্রিডম পার্টির নেতা গার্ট উইল্ডারস বলেছেন, ‘ব্রিটেনের মতো নেদারল্যান্ডসে ‘নেক্সিট’ ভোট আয়োজন করা চাই। আমরা আমাদের দেশ, আমাদের অর্থসম্পদ, আমাদের সীমান্ত ও অভিবাসন নীতির দায়িত্ব নিতে চাই।’
আগামী মার্চে নেদারল্যান্ডসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ পর্যন্ত কয়েকটি জনমত জরিপে গার্ট উইল্ডারসের দলকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। সর্বশেষ আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ৫৪ শতাংশ মানুষ ইইউতে থাকার প্রশ্নে ব্রিটেনের মতো গণভোট আয়োজনের পক্ষপাতী।
এদিকে ডেনমার্কের রক্ষণশীল পিপলস পার্টি ‘ব্রিটিশ জনগণের সাহসী সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন’ জানিয়ে বলেছে, সবারই মাথা উঁচু করে চলা চাই।
জার্মানির অভিবাসন ও ইইউবিরোধী রাজনৈতিক দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়েশল্যান্ডের (এএফডি) প্রধান বিয়েট্রিক্স ফর স্টর্চ ‘ব্রিটেনের স্বাধীনতা দিবসে’ অভিনন্দন জানিয়েছেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলজ ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুংকারের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক জোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যর্থ হয়েছে।
তবে জার্মান চ্যান্সেলর ও ইউরোপের অন্যতম নেতা অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের ভাষায়, ‘এ বিরাট ধাক্কা সামলে ইউরোপীয় সমন্বয়ের স্বপ্ন এগিয়ে যাবে।’
এদিকে ব্রেক্সিট পরবর্তী মন্তব্যে অস্ট্রিয়ার রক্ষণশীল দল ফ্রিডম পার্টি (এফপিও) ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রধানদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। দলটি বলেছে, ইইউতে সংস্কার আনা না হলে অস্ট্রিয়াও ব্রিটেনের মতো গণভোট আহ্বান করবে।