ফেঁসে যাচ্ছেন বেবিচকের পরিচালকসহ ২ প্রকৌশলী

civilফেঁসে যাচ্ছেন বেবিচকের (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) পরিচালকসহ দুই প্রকৌশলী। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি আর ফাইল আটকে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগে ১৯ জুন তাদের দুদক কার্যালয়ে তলব করা হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ জিজ্ঞসাবাদে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। দুদকের উপপরিচালক হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম এখন তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু ঘুষ-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
তবে বিমানবন্দরের ১২ মেগা প্রকল্পের বিষয়ে এখনও বড় ধরনের কোনো অনিয়ম পায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। প্রকল্পগুলো নিয়ে এখনও অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদকের এক উপপরিচালক যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শিগগির মামলা করার জন্য কমিশনে আবেদন জানানো হবে। অনুমোদন পেলেই মামলা করা হবে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অভিযুক্তদের পক্ষে দুদকে তদবির শুরু করেছে। এদের মধ্যে বেশ ক’জন প্রভাবশালী ঠিকাদার ও উত্তরা এলাকার কয়েকজন যুবলীগ নেতাও রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের এসব নেতার অনেকে নামে-বেনামে সিভিল এভিয়েশনে ব্যবসাও করছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, যাদের দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা হলেন- বেবিচকের পরিচালক প্রশাসন গৌতম কুমার ভট্টাচার্য, নির্বাহী প্রকৌশলী আছির উদ্দিন ও সহকারী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন। দুদকের উপপরিচালক হেলাল উদ্দিন শরীফের স্বাক্ষরে ৯ জুন এ ৩ জনের চাকরি সংক্রান্ত নথি তলব করা হয়। চিঠিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চাকরি শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত যেসব স্টেশনে ছিলেন সে সময়কার বিস্তারিত তথ্য দেয়ার জন্য বলা হয়। বিভিন্ন সময়ে তাদের পদোন্নতি সংক্রান্ত যেসব প্রজ্ঞাপন ও নথি জারি হয়েছে তার সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য বেবিচক থেকে দাখিলকৃত সম্পদের বিবরণীর সত্যায়িত ফটোকপিও দিতে বলা হয়। এরপর এক চিঠিতে ১৯ জুন এ ৩ জনকে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়।
সম্প্রতি বেবিচকের ইএম (ইলেকট্রিক অ্যান্ড মেকানিক্যাল) বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠে। নির্বাহী প্রকৌশলী আছির উদ্দিনকে সম্প্রতি কক্সবাজার বিমানবন্দরে জেনারেটর সরবরাহ কাজে অনিয়ম তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নিযুক্ত করা হয়। অভিযোগ আছে, তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে আছির উদ্দিন জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে চিঠি দেয়। আছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের জহুরা মার্কেটের সামনে ও ১৪ নম্বর সেক্টরের বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন।
এ ঘটনায় বেবিচক থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি আছিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে রিপোর্ট প্রদান করলেও সে রিপোর্ট দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখেন পরিচালক প্রশাসন গৌতম কুমার ভট্টাচার্য। দুদকের চিঠিতে পরিচালক প্রশাসন গৌতম কুমারেরও চাকরি সংক্রান্ত ব্যক্তি নথি, শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত যেসব স্টেশনে চাকরি করেছে তার বিবরণ এবং পদোন্নতির কাগজ ও সম্পদ বিবরণীর দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
অপরদিকে সহকারী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ইএম বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প তৈরি ও এ খাতে ঠিকাদারদেও কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। ২৭ বছর ধরে তিনি একই পোস্ট এবং একই জায়গায় কাজ করছেন। সম্প্রতি তাকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে সে আদেশ বাতিল করান। মুরাদ হোসেন এতটাই প্রভাবশালী যে, তিনি সিভিল এভিয়েশনের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও তোয়াক্কা করেন না। চাকরিকালীন তিনি নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
সূত্রঃ যুগান্তর

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.