শাহজালাল থেকে শত শত টন কার্গো পণ্য উধাও

file (7)হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শত শত টন কার্গো পণ্য উধাও হয়ে গেছে। মাসের পর মাস ঘুরেও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না এসব এক্সক্লুসিভ পণ্যের। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়ছে। কাগজে-কলমে এসব পণ্য ঢাকায় পৌঁছলেও বাস্তবে সেগুলো কার্গো গোডাউনে নেই। এমনকি হ্যান্ডলিং এজেন্ট বাংলাদেশ বিমানও বলতে পারছে না পণ্যগুলোর অবস্থান কোথায়। অতি গুরুত্বপূর্ণ এসব পণ্যের খোঁজে বিভিন্ন গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানির মালিক ও তাদের মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্টরা গলদঘর্ম হচ্ছেন।
বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন যুগান্তরকে জানান, কার্গো পণ্যের বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। এটা বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের দায়িত্ব। এখানে মন্ত্রণালয়ের হাত নেই। বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল ইনামুল বারী বলেন, সিভিল এভিয়েশনের কারণে তারা মালামাল সাজিয়ে ও গুছিয়ে রাখতে পারছেন না। তিনি বলেন, কার্গো টার্মিনালের জায়গার মালিক সিভিল এভিয়েশন। বিমান শুধু হ্যান্ডলিং এজেন্ট। এখন সিভিল এভিয়েশনকে যদি জায়গা না দেয়া হয় তাহলে বিমান কোথায় মালামাল রাখবে। তারা গত দুই বছর ধরে কার্গো গোডাউন ঠিক করে দিচ্ছে না। এ কারণে রানওয়েজুড়ে মালামাল এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। সিভিল এভিয়েশনের মেম্বার অপারেশন এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জুলাইয়ের মধ্যে কার্গো গুদামের সবকিছু ঠিক করে দেয়া হবে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, শাহজালালের রানওয়ে সংলগ্ন ‘বে’ এরিয়াতে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে কয়েক হাজার টন কার্গো। বেবিচকের অবহেলা আর উদাসীনতায় এসব পণ্য কার্গো গোডাউনে আনা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কার্গো গুদামে র‌্যাকের মধ্যে পেলেট নেই। এ কারণে এখানে মালামাল সাজিয়ে রাখা যাচ্ছে না। রানওয়ে থেকে অবাধে চুরি হচ্ছে গার্মেন্ট আইটেম, মোবাইল ফোন ও ইলেক্ট্রনিক্সসহ মূল্যবান পণ্যসামগ্রী। সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধিরা মালামাল ঢাকায় পৌঁছার এয়ার অ্যারো বিলের কপি নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিমানের ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সের বারান্দায় ঘুরলেও পণ্যের হদিস পাচ্ছেন না। তাদের বক্তব্য, গত ২০ বছরেও এ ধরনের অবস্থা হয়নি।
ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শেখ মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, কার্গো পণ্য সংরক্ষণ ও ডেলিভারিতে অব্যবস্থাপনা, খোলা আকাশের নিচে পোশাক শিল্পের কাঁচামালসহ মূল্যবান পণ্য ফেলে রাখা, পণ্য চালান ডেলিভারিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, লাগামহীনভাবে ওয়্যারহাউস থেকে মালামাল চুরি হওয়া এবং ডেলিভারি কাজে ব্যবহৃত ট্রলি ও ফর্ক লিফট না থাকার বিষয়ে তারা বিমানকে আলটিমেটাম দিয়েছেন। বিষয়টি তারা বিমানমন্ত্রী এবং সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা ঠিক না হলে তারা ওয়্যারহাউস থেকে সব ধরনের পণ্য চালান খালাস ও রফতানি পণ্য প্রেরণ বন্ধ করে দেবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কাগজে-কলমে এসব পণ্য কার্গো গোডাউনে থরে থরে সাজানো থাকার কথা। কিন্তু ওয়্যারহাউসগুলোতে র‌্যাক থাকলেও র‌্যাকে পেলেট না থাকায় মালামাল রাখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সেগুলো বিমানবন্দরে খোলা আকাশের নিচে অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখতে হচ্ছে। বিমান সূত্রে জানা গেছে, অহেতুক নানা কারণ দেখিয়ে পেলেটগুলো ক্রয়ে বারবার বাধা দিচ্ছে সিভিল এভিয়েশন।
সিএন্ডএফ এজেন্ট ও কার্গো আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টিতে ভেজা ও খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা হদিসবিহীন শতাধিক টন কার্গো পণ্যের মূল্য হবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। ২/৩ মাস আগে আসা মূল্যবান পণ্য এখনও খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। এ কারণে অনেক গার্মেন্ট কারখানার রফতানির আদেশ বাতিল হয়েছে। আবার অনেকে যথাসময়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য রফতানি করতে পারবেন না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।
ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, ৩টি সংস্থার সমন্বয়হীনতা, একগুঁয়েমি, চুরি, দুর্নীতি আর খামখেয়ালির কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশের আমদানি খাত। এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার পণ্য চুরির অভিযোগ সিভিল এভিয়েশন, এয়ারফ্রেইট ও বিমানের টেবিলে ফাইলবন্দি হয়ে আছে। বছরের পর বছর ধরে এসব অভিযোগ পড়ে থাকলেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএমএ খায়ের  জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোনো এয়ারলাইন্স অবতরণ করার ৬ ঘণ্টার মধ্যে ওই ফ্লাইটের মালামাল কার্গো গোডাউন, ওয়্যারহাউস কিংবা ক্যানোপি এলাকায় পৌঁছাতে হবে। এর মধ্যেই সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টের কাছে মালামালের এয়ার-অ্যারো বিল দিতে হবে। সিএন্ডএফ কর্তৃপক্ষ এ বিলের কপি নিয়ে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বিমানের কার্গো কর্তৃপক্ষকে দিলে তারা মালামাল ডেলিভারি দেবে। কিন্তু এটি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
সরেজমিন শাহজালালের কার্গো কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, সব গোডাউনে পড়ে আছে কমার্শিয়াল ব্যাগেজ। গত ৬ মাস ধরে অহেতুক এসব পণ্য দিয়ে গোডাউন বোঝাই করে রাখা হয়েছে। অপরদিকে বিমানবন্দরের রানওয়ে সংলগ্ন ‘বে’ এরিয়াতে পড়ে আছে মূল্যবান কার্গো পণ্য। অধিকাংশ পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। কার্টন ছিঁড়ে গেছে। গার্মেন্টের কাপড়গুলোতে রানওয়েতে থাকা পানি-কাদায় একাকার। দেখার কেউ নেই।

সূত্রঃ যুগান্তর

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.