বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি রেস্তোরাঁয় শুক্রবার রাতে বেশ কিছু মানুষকে জিম্মি করে অস্ত্রধারীরা। তারা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ঢাকার কূটনৈতিক জোনে পুলিশের সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থান নেয় তারা।
আজ শনিবার খুব সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে থাকেন তখন নতুন করে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। সেনা সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে সেখানে উপস্থিত হন।
বেশ কয়েক ঘন্টার অচলাবস্থার পর গত রাতে বাংলাদেশী কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশের দু’জন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট। ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আমাক বার্তা সংস্থা রিপোর্ট করেছে যে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিদেশীরা ঘন ঘন যাতায়াত করেন এমন একটি রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছে ইসলামিক স্টেটের কমান্ডোরা। ৮ থেকে ১০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ওই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে। তখন রাত প্রায় পৌনে নয়টায় সেখানে প্রায় ২০ জন বিদেশী নৈশভোজ করছিলেন। এ কথা বলেছেন ওই রেস্তোরাঁর কিচেনে কাজ করা সুমন রেজা। তিনি পালিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি বলেছেন, গুলি ও বেশ কিছু বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটানোর পূর্বে তারা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে স্লোগান দেয়। সুমন বলেছেন, হামলাকারীদের সঙ্গে ছিল পিস্তল, তরবারি ও বোমা।
পরে আমাক রিপোর্ট করেছে যে, আর্টিজান রেস্তোরাঁয় কমান্ডো হামলার পর বিভিন্ন দেশের ২০ জনেরও বেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ দাবি নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই।
আমাক আজ খুব সকালে বলেছে যে, তারা বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। বলা হয়েছে, এসব ছবিতে হামলায় নিহত বিদেশীদের মৃতদেহ রয়েছে। তারা আরও দাবি করে যে, তাদের কাছে জিম্মিরা আটক রয়েছেন। পরে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অচলাবস্থা নিরসনে ওই রেস্তোরাঁর দিকে এগিয়ে যান সেনা সদস্যরা। এ সময় রেস্তোরাঁর ভিতর থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি উগ্রপন্থিদের হামলায় বাংলাদেশ কাঁপছে (রকড)। তারই সর্বশেষ সংযোজন শুক্রবারের এ হামলা। গত বছর ১৮টি হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট। এসব হামলা হয়েছিল হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে, এক সময়ের উদার এ দেশটি ধর্মান্ধতার গ্রাসে পরিণত হচ্ছে।
তবে সরকার তা স্বীকার করে না। বেশ কয়েক মাসে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদা হামলার দায় স্বীকার করলেও এ দুটি সন্ত্রাসী সংগঠনের কোন উপস্থিতি বাংলাদেশে নেই বলে দাবি সরকারের। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন অভিযান চালায় সরকার। তাতে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞানের প্রফেসর ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলী রিয়াজ বলেছেন, স্থানীয় জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অব্যাহতভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে। এমন অস্বীকার এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে না।
আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তাতে ছোট্ট ছোট্ট গ্রুপগুলো একত্রিত হতে পারে না। এটা পরিস্কার যে, এ হামলা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। এতেও যদি তাদেরকে (সরকার) প্রত্যাখ্যানের অবস্থান থেকে বের করে আনতে যথেষ্ট না হয়, তাহলে আমি জানি না কি হলে তারা এ অবস্থান থেকে সরে আসবেন।
শুক্রবার গুলশাল এলাকাজুড়ে শোনা যায় গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ। এদিন থেকে আর্টিজান রেস্তোরাঁ ঘিরে রাখেন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা এমন ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ওই রেস্তোরাঁটি অভিবাসী, কূটনীতিক ও মধ্যম শ্রেণীর মানুষের কাছে পরিচিত। এখানে কাজ করতেন বেশ কিছু বিদেশী। তার মধ্যে ইতালির একজন ও আর্জেন্টিনার একজন বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তারা কোথায় আছেন তা জানা যায়নি।
সুমন রেজা বলেছেন, তিনি ও অন্য একজন কর্মচারী ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে বেরুতে সক্ষম হন। সুমন রেজা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, হামলাকারীরা বেশ কিছু বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সবার মধ্যে মারাত্মক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে আমি পালিয়ে আসতে সক্ষম হই। তবে রেস্তোরাঁ কর্মচারী সহ মোট কতজনকে জিম্মি করা হয়েছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। হামলাকারীদের পরিচয়ও সনাক্ত করা যায় নি। র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ শুক্রবার রাতে বলেছেন, যারা রেস্তোরাঁর ভিতরে আছেন তাদেরকে আমাদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করছি। আমাদেরকে তাদের দাবি সম্পর্কে জানাতে বলছি।
৫ ঘন্টা পরও হামলাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে নি পুলিশ। রেস্তোরাঁর চারদিক ঘিরে রাখে পুলিশ। পুলিশ যেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন ব্যবসায়ী ফজলে রহিম খান। তিনি রেস্তোরাঁটি পরিষ্কার দেখতে পারছিলেন না। তিনি মনে করেন তার ছেলে তাহমিদ হাসিব খান (২২)কেও জিম্মি করা হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে শুক্রবার কানাডা থেকে দেশে ফিরেছে তার ছেলে। পারিবারিকভাবে তারা ইফতার করেছেন। তারপরই তার ছেলে ওই রেস্তোরাঁয় যান।
তিনি বলেন, আমি শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে ও খবর পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কিরবি নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এ হামলায় কে জড়িত, তাদের উদ্দেশ্য কি সে সম্পর্কে এত তাড়াতাড়ি আমরা কিছু বলতে পারবো না। তিনি জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন মিশনে যেসব মার্কিনি কাজ করেন তারা সবাই নিরাপদে রয়েছেন। তারপরও কর্মকর্তারা বাংলাদেশে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কে কোথায় আছেন তা জানার চেষ্টা করছেন।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস।