৪-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং ফেনীতে ! 

ফেনী: বাবার কাছে আইপিএস কেনার টাকা নেই, জেনারেটরে অতিরিক্ত খরচ, চার্জার লাইটের আলো ঘণ্টা খানেকের বেশি থাকে না। পড়াশোনা করতে চাইলে মোমবাতি কিংবা হারিকেনই ভরসা।

বিদ্যুৎ সংযোগ থেকেও আছি অন্ধকারে। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটছে বিদ্যুৎহীন।গরমে মরার দশা।

বিদ্যুৎ নিয়ে অসহনীয় ভোগান্তির কথা এভাবেই বলছিলেন ফেনীর ছাগলনাইয়ার আবদুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের স্নাতক পড়ুয়া পূর্ব দেবপুর গ্রামের এক শিক্ষার্থী।

জ্বালানি সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত শিডিউলের বাইরেও ফেনীতে অসহনীয় মাত্রায় লোডশেডিং হচ্ছে।

গত কয়দিনে ফেনী শহরের কোথাও কোথাও ২-৩ ঘণ্টা, আর উপজেলাগুলোতে ৪-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

এর প্রভাবে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনে যেমন ছন্দপতন ঘটছে, ব্যবসা বাণিজ্য, পড়াশোনাসহ সামগ্রিক খাতেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ফেনীর নির্বাহি প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম  বলেন, শনিবার (২৩ জুলাই) রাত্রিকালীন চাহিদার ১৩০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া দিনের বেলায় ৭৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৫০ মেগাওয়াট।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র জানায়, দিনে ৭৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৪৭ মেগাওয়াট এবং রাতে গড়ে ৬০ শতাংশ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া চাহিদার বা ঘাটতির বাকি বিদ্যুৎ লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে।

লোডশেডিংয়ের প্রভাব উল্লেখ করে ফেনী শহরের মিজান রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অপু করিম বলেন, ব্যবসায়ীক এলাকাগুলোতে লোডশেডিং শিডিউল নির্ধারণে আরেকটু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা অনেক ক্ষতির মুখ থেকে বাঁচতে পারব। গত কয়দিনে প্রতিষ্ঠানে এ সমস্যায় কিছুটা প্রভাব ফেলেছে।

পরশুরামের সত্যনগর এলাকার মো. সুমন নামের এক গ্রাহক বলেন, ফিডার (একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাধীন এলাকা) ধরে লোডশেডিংয়ের রুটিন করা হলেও তা মানছে না পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এখানে দৈনিক ৭-১০ ঘণ্টার বেশিও লোডশেডিং হচ্ছে। এমন দায়িত্বহীনভাবে চললে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাবে।

সোনাগাজী উপজেলার অনিক বণিক নামে আরেক গ্রাহক বলেন, শহর ও পৌর এলাকাগুলোর চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং কয়েকগুণ বেশি হচ্ছে। এতে শিক্ষা, ব্যবসায় ও কৃষি খাতসহ নানা খাতে দুর্ভোগ শুরু হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি করে মো. সোহাগ নামে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের এক চালক বলেন, ঠিকমতো গাড়ি চার্জ দিতে পারছি না। এতে বেশিরভাগ সময় এখন বাড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে। এভাবে হলে আমাদের একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

শিডিউল বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে পরশুরাম পল্লী বিদ্যুৎ এর ডিজিএম গোলাম রাব্বানি বলেন, গতকাল (শনিবার) সকালে উপজেলায় বিদ্যুৎ এর চাহিদা ছিল সাড়ে ৬ মেগাওয়াট। বিপরীতে আড়াই মেগাওয়াট সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে ৬০ শতাংশই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক ক্রমান্বয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এ সংকট মোকাবিলায় সাধারণ জনগণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগকেও আরও দায়িত্বশীল আচরণ করার কথা বলছেন বিশিষ্টজনরা। এছাড়া নাগরিকদের এসিসহ ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহারে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।

এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে আমন মৌসুমের ধান চাষ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। জেলার বিদ্যুচ্চালিত গভীর নলকূপগুলো এবং সেলুগুলো বন্ধ থাকায় জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।

দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে পরশুরামের জয়ন্তীনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম নামে এক কৃষক বলেন, দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টাই যদি লোডশেডিং হয় তাহলে জমিতে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা কী? বৈদ্যুতিক সমস্যায় আমাদের মতো প্রান্তিক চাষিরা জমি প্রস্তুত নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি।

আবুল কালাম নামে সোনাগাজীর এক কৃষক  বলেন, মোটর দিয়ে জমিতে সেচ দিতে হয়। বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে একটানা পুরো জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ঠিকমতো মৌসুমি বৃষ্টি না থাকায় জমি শুষ্ক হয়ে আছে। যার জন্য দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।

অপরদিকে করোনাকালীন দীর্ঘসময় পর শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও গত কয়দিনের লোডশেডিংয়ে নানামুখী প্রভাব পড়েছে শিক্ষাখাতে। শ্রেণিকার্যক্রম থেকে শুরু করে ব্যাহত হচ্ছে বাসা-বাড়িতে শিক্ষাদান প্রক্রিয়াও।

মাজহারুল হক জিসান নামে এক অভিভাবক বলেন, গরমে এতো বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটে এমনিতেই বাচ্চারা অস্বস্তিবোধ করছে। সেজন্য পড়ার জন্য বাড়তি চাপও দিতে পারছি। তবে এ অবস্থা চলমান থাকলে শিক্ষার্থীরা আবার পিছিয়ে পড়বে।

শ্রাবন্তী চৌধুরী নামে আরেক অভিভাবক বলেন, সন্ধ্যার পর পড়াতে বসলেই লোডশেডিং শুরু হয়। বাচ্চাকে পরে রাত্রিকালীন পড়তে আর চাপ দেওয়া যায় না।

শহরের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মিজানুর রহমান  বলেন, ঠিকমতো শ্রেণিতে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না। ছোট বাচ্চাদের গরমে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হওয়ার শঙ্কায় ক্লাসের সময় কমিয়ে আনা হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: জুলাই ২৪, ২০২২
এসএইচডি/এসআরএস

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.