বড় ব্যবসায়ীদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও ৫ বছরের মাল্টিপল ভিসা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য ভারতীয় বিজনেস ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে দ্বিগুণ মাল্টিপল ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ব্যবসায়ীদের ২ হাজার ২৭২টি ভিসা দেয়া হয়েছে, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৭৭২টি এবং ২০১৬ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২ হাজারটি ভিসা দেয়া হয়েছে। এখন ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদে বড় ব্যবসায়ীদের মাল্টিপল ভিসা দেয়া হচ্ছে। আগামীতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও একই মেয়াদের মাল্টিপল ভিসা দেয়া হবে।
সোমবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) তৃতীয় প্রান্তিকের মধ্যাহ্নভোজ সভায় এ কথা জানান তিনি। এমসিসিআই সভাপতি নাসিম মঞ্জুরের সভাপতিত্বে মধ্যাহ্নভোজ সভায় এমসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যের শুরুতে ভারতীয় হাইকমিশনার গুলশান ট্রাজেডির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ একা নয়, ভারতের জনগণ সঙ্গে রয়েছে। একে অপরকে সহায়তার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ কমছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০১৩-১৪তে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ভারতের রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। পক্ষান্তরে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার করতে পেট্রাপোলে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। সড়ক প্রশস্ত করতে এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে টেকসই সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় ভারত।
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতীয়দের বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। ক্রমশই বিনিয়োগ বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫তে বিনিয়োগ বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিটে ভারতের দুটি বড় কোম্পানি ১১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। একইভাবে ভারতেও বাংলাদেশের বিনিয়োগ বেড়েছে। ভারতের বিশাল বাজার কাজে লাগাতে পারেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
স্বাগত বক্তব্যে এমসিসিআই সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ঐতিহ্যগত মিল রয়েছে। তবে সীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উচ্চ পর্যায়ের অনেক নীতিগত ঘোষণা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে। স্থলবন্দরগুলোর দুর্বল অবকাঠামো বিশেষ করে সরু রাস্তা, পর্যাপ্ত ওয়্যারহাউসের অভাব, পণ্য ছাড়ে ট্রাকের দীর্ঘ যানজট ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ কারণে ব্যবসার খরচ ও সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করলে সড়ক পথে পণ্য পরিবহন সহজ হবে এবং খরচ কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, কিছু ইস্যু রয়েছে যেগুলোর সমাধান হওয়া উচিত। দুই দেশের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন নদীর পানির বণ্টন হওয়া উচিত।