চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে রেকর্ড যাত্রী পরিবহন

1_0আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুই রুটেই যাত্রী পরিবহন বেড়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ২০১৫ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১১ লাখ ৭০ হাজার যাত্রী পরিবহন হয়েছে, যা এর আগের বছরের তুলনায় এক লাখ বেশি, শতাংশের হিসাবে প্রায় ১০ শতাংশ। আর ছয় বছরের ব্যবধানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহন দ্বিগুণ হয়েছে।

আর যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বিবেচনায় দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ রুটের চেয়ে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহন বেশি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে যাত্রীবাহী ফ্লাইট সংখ্যাও।

এর কারণ সম্পর্কে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে কানেকটিভিটি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে; এর ফলে যাত্রা সহজও হয়েছে। আর চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ায় আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে ভ্রমণ, চিকিৎসা এবং ব্যবসায়িক কাজেও এখন প্রচুর লোক বিদেশে যাওয়ায় ফ্লাইট সংখ্যা বেড়ে গেছে।’

রিয়াজুল কবীর বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ১৮ থেকে ২২টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করছে। আর অভ্যন্তরীণ রুটে আসা-যাওয়া করছে ৮৪টি ফ্লাইট। আমাদের বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর সক্ষমতা রয়েছে। যেটা প্রতিবছর হজ মৌসুমে আমরা প্রমাণ করে আসছি। তবে লোকবল ও যন্ত্রপাতির কিছু সংকট রয়েছে।’

জানা গেছে, ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে মোট যাত্রী পরিবহন হয়েছিল দুই লাখ ৭৬ হাজার জন। ২০০৯ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার জন। আর ২০১৫ সালেই সেই সংখ্যা আবারও দ্বিগুণ হয়ে ১১ লাখ ৭০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইতিহাসে এর আগে এত যাত্রী পরিবহন হয়নি। আর ২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে যাত্রী পরিবহন বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

হিসাব কষে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ ৮০ হাজার জন। আর ২০১৬ সালের একই সময়ে যাত্রী পরিবহন বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৯১ হাজার জন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী ছিল তিন লাখ ৮০ হাজার জন আর অভ্যন্তরীণ ছিল পৌনে তিন লাখ।

চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশীয় বিমান সংস্থা হচ্ছে রিজেন্ট এয়ার ও বাংলাদেশ বিমান। আর বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো হচ্ছে ওমান এয়ার, এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাই দুবাই ও রোটানা জেট। অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বিমান সংস্থা হচ্ছে ইউএস বাংলা, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন।

যাত্রী পরিবহন ১০ শতাংশ বাড়ার কৃতিত্ব অবশ্যই বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের—এই মন্তব্য করে রিজেন্ট এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুফ হাবিব বলেন, ‘আমরা এখন চট্টগ্রাম থেকে তিনটি আন্তর্জাতিক রুটে (মাসকাট, কলকাতা ও ব্যাংকক) ফ্লাইট চালাচ্ছি, যা আগে ছিল না। ফলে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী তো বাড়বেই।’ তিনি বলেন, ‘এই রানওয়ে দিয়েই বড় পরিসরের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান দিয়ে ফ্লাইট চালাচ্ছি ঝামেলা ছাড়াই। তবে পার্কিং নিয়ে সমস্যা এবং বোর্ডিং ব্রিজ সংকট রয়েছে। আর বিমান চালাতে পুশব্যাক কার্ডে এত বেশি চার্জ আদায় করা হয়, যা পৃথিবীর কোথাও নেই। এ ধরনের মাসুল এবং সংকটগুলো কাটানো গেলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে একটি আঞ্চলিক হাবে পরিণত করা যাবে।’

কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়ের প্রশস্ততা প্রয়োজনের তুলনায় ছোট বলে প্রশ্ন তুলেছিল চট্টগ্রাম চেম্বার। কিন্তু বিমানবন্দর ব্যবহারকারীরা বলছে, বিদ্যমান রানওয়েতে বোয়িং ৭৭৭, ৭৩৭, ৭৪৭ এবং এয়ারবাস ৩২০ পর্যন্ত অনায়াসে নামানো যায়। তবে এয়ারবাস ৩৮০ নামানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য রানওয়েকে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক রিয়াজুল কবীর বলেন, এখন জমি অধিগ্রহনের কাজ চলছে। আর বোর্ডিং ব্রিজের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সেবা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে জানিয়ে গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর বলেন, ‘দেশে-বিদেশে বিমান যাত্রা এখন বিলাসিতা নয়, অনিবার্য হয়ে পড়েছে। সময় বাঁচানোর জন্য একজন বিদেশি ক্রেতা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে শহরের ভেতর কোনো পাঁচ বা চারতারা হোটেলে যান তখনই তাঁর দ্বিগুণ-তিন গুণ সময় লেগে যায়। এর জন্য তিনি দ্বিতীয়বার চট্টগ্রামে আসতে আগ্রহ দেখান না। এই যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করা গেলে যাত্রী অনেক বেশি বাড়ত।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.