রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এ আদালত। বিচারিক দায়িত্ব ছাড়াও এ আদালতের দুই জোড়া চোখ অতন্দ্র প্রহরীর মতোই জরুরি সেবায় নিয়োজিত থাকে সব সময়।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আদালত নিজেই ছুটে যান ভুক্তভোগী বা ক্ষতিগ্রস্তের কাছে।
দিনক্ষণ বেধে শুনানি বা দিনের পর দিন ধরে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নয়। বরং তাৎক্ষণিক প্রতিকার ও বিচারের নিশ্চয়তা, ক্ষতিগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতি বা সংবেদনশীলতা প্রর্দশনের মাধ্যমে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে প্রবাসেও এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় এ আদালত।
মাত্র দু’জন বিচারকের অদম্য চেষ্টা আর আন্তরিকতায় ঢাকার এ আদালত অর্জন করেছেন লাখো মানুষের আস্থা আর ভালোবাসা।
হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরের এ “ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট” জনগণের ভালোবাসা পেলেও পায়নি সরকারের।
সরকারি অবহেলা আর বঞ্চনার চিত্র লেপ্টে আছে আদালতের পরতে পরতে। বিভিন্ন দেশে এ ধরনের আদালতের কার্যক্রম যেখানে পরিচালিত হয় চারটি পালায়। সেখানে ঢাকার এ আদালত চলে মাত্র দু’টি শিফটে। ম্যাজিস্ট্রেট ও মাত্র দু’জন। এর বিপরীতে দু’জন পিয়ন, দু’জন কার্যসহকারী আর মাত্র একজন পেশকার দিয়েই চলছে এ আদালতের কার্যক্রম।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীর অধিকার সুরক্ষা ও অপরাধ দমনে এ আদালতের রয়েছে কেবল “নাই” আর “নাই”!
একদিকে রয়েছে জনবল সংকট। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় মৌলিক সরঞ্জামের অভাব। দুইয়ে মিলে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরের চিত্রটা বেমানান উদাহরণ সৃষ্টি করে আছে এ আদালত।
এমনটিই বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা।
তার ভাষায়, আদালতের চেহারাটা একেবারেই এনালগ। ডিজিটাল ছোঁয়া না পাওয়ার বিষয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
সেটা কি? উত্তরটা নিজেই তুলে ধরেন ওই কর্মকর্তা।
ধরুন আমাদের সঙ্গে আদালতের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে জড়িত। তা সত্বেও এ আদালতে নেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ বা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার কোন মনিটর। নেই ফ্লাইট ইনফরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেম (এফআইডিএস) মনিটর। নেই ম্যাজিস্ট্রেটদের হাতে আমাদের চ্যানেলের কোন ওয়াকিটকি। অর্থাৎ কমিউনিকেটিং মেটারিয়ালস্। এসব অসম্পূর্ণতার কারণে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা নিজ কক্ষে বসেই বঞ্চিত হচ্ছেন বাইরের দৃশ্য পর্যবেক্ষণে।
আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে যে ওয়াকিটকি সেটি বিমানের দেওয়া। কেবলমাত্র বিমানের কর্মীদের সঙ্গেই একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম এই ওয়াকিটকি।
উপরোন্ত আদালতের সরকারি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নেই কোন ল্যান্ড ফোন, রয়েছে কেবল একটি ইন্টারকম।
যেটা জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তার মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ম্যাজিস্ট্রেটরা নিজেদের ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যবহার করেই পরিচালনা করেন দৈনন্দিন কার্যক্রম।
১৯৯৬ সালের ৩১ মার্চ ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন জামিলের হাত ধরে এ আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেও জনগণের মাঝে এর অস্তিত্ব বলতে ছিলো সাইনবোর্ড।
২০১৪ সালের ৬ জুলাই ২১ ব্যাচের শরীফ মো. ফরহাদ হোসেন ও একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন ২২ ব্যাচের ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউছুফ। তাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গড়া ম্যাজিস্ট্রেট অল এয়ারপোর্ট নামের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সরাসরি এ আদালতের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে দেশে ও বাইরে।
বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা বন্ধে আদালতের দ্রুত ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপে জনপ্রিয়তা পায় এর কার্যক্রম।
যোগাযোগ করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মো. ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কি নেই। সেটা বড় কথা নয়। বরং আপনি কি করতে চান সেটাই বড় কথা।
তিনি বলেন, নিজের মেধা ও মননশীলতাকে কাজে লাগিয়ে সীমাবদ্ধতার পাহাড় কতটুকু অতিক্রম করছেন সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। তবে হ্যাঁ এসব সুবিধা থাকলে আদালতের কার্যক্রমে সুবিধে হতো।
তিনি বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অংশীজনদের সঙ্গে যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। এটা কিন্তু সরকারি দায়িত্বের বাইরে। আমাদের ফেসবুক পেজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছেন তিন লাখের বেশি অনুসারি।
তাদের অভিযোগ, প্রতিকার, প্রার্থনা আর পরামর্শই আমাদের শক্তি। তাই সীমাবদ্ধতা কিছুটা থাকলেও নির্ভিক অগ্রযাত্রায় ক্রমেই এগিয়ে চলছে এ আদালত যোগ করেন মো. ফরহাদ হোসেন।