প্রতি ফ্লাইটেই সিট খালি : ৭ হাজার হজযাত্রী পরিবহন অনিশ্চিত

first-hajj-flightহজ ফ্লাইট পরিচালনায় এখনও মেলেনি ভাড়ার উড়োজাহাজ। ফলে তড়িঘড়ি রিসিডিউল করে ৪১৯ আসনের উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার কারণে প্রতি ফ্লাইটেই ১৬৭ হজযাত্রী সৌদি আরব যেতে পারছেন না। তার ওপর টিকিট নিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের কারণে গড়ে প্রতি ফ্লাইটে ২৫ থেকে ৩০ সিট খালি যাচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতি স্লটে ২শ’ আসন খালি যাচ্ছে। যাত্রীর অভাবে ইতিমধ্যে ৭টি ফ্লাইট বাতিলও করা হয়েছে। এই অবস্থায় আগামী ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক স্লট (১১২টি) দিয়ে ৫৫ হাজার হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত ৪ অক্টোবর থেকে ৫৮৬ আসনের বড় উড়োজাহাজ দিয়ে হজের ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল। সে অনুযায়ী সৌদি আরব থেকে ১১২টি স্লটও (বিমান অবতরণের সংখ্যা) অনুমোদন নেয়া হয়। কিন্তু লিজিং প্রতিষ্ঠান ঈগল এক্সপ্রেসের দুর্নীতি ও পরিকল্পনা বিভাগের অজ্ঞতার কারণে সেই ভাড়ার এয়ারক্রাফট আসেনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিমান যদি বড় উড়োজাহাজ ভাড়া করতে না পারে তাহলে নির্ধারিত সময়ে ৬ থেকে ৭ হাজার হজযাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে না। এজন্য বাড়তি স্লট নিতে হবে। শেষদিকে প্রতিদিন তিনটির পরিবর্তে ৪টি ফ্লাইট চালাতে হবে। কিন্তু সৌদি সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, হজের এই মৌসুমে বিশ্বের সব দেশ থেকে জেদ্দা বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত স্লট বরাদ্দ দিতে পারবে না তারা। ফলে এ বছর হজযাত্রী পরিবহনে বড় ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বিমানের জন্য। বিমানের মতিঝিল সেলস অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভিসা থাকার পরও হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠাতে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে কিছু হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে। এ কারণে প্রতিদিনই সিট খালি নিয়ে ফ্লাইট ছাড়তে হচ্ছে বিমানকে। হজযাত্রী না থাকায় মঙ্গলবার পর্যন্ত বিমানের মোট সাতটি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
কিন্তু হজ এজেন্সি ও ট্রাভেল এজেন্ট সূত্রে জানা যায়, এ বছর বিমানের প্রতিটি হজ টিকিট বিক্রি হয়েছে গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে। ঘুষ না দেয়ায় বিমান সব এজেন্সিকে টিকিট দেয়নি। পছন্দের কিছু এজেন্সিকে বিমানের অধিকাংশ টিকিট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যার কারণে এখন ট্রাভেল এজেন্টদের ওই সিন্ডিকেট টিকিটপ্রতি গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা না দিলে তারা টিকিট বিক্রি করছে না। এতে প্রথম দিকে অনেক হজযাত্রী টিকিট না পাওয়ায় প্রতিদিনই আসন খালি নিয়ে ফ্লাইট ছাড়তে হচ্ছে বিমানকে।
আশকোনা হজক্যাম্পের হজ কর্মকর্তা ড. সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত ভিসা আছে। কিন্তু কিছু হজ এজেন্সি যাত্রীদের সৌদি পাঠাতে গড়িমসি করছে এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। একটি এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধেও ঘুষ নিয়ে টিকিট বিক্রির অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর ও হজ অ্যাসোসিয়েশনকে (হাব) জানানো হয়েছে।
হজ ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সৌদি দূতাবাস থেকে ৬৩ হাজার ২১২ হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৯ হাজার ১৩১ যাত্রী নিরাপদে সৌদি পৌঁছেছেন। হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, বাড়ি ভাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগে হজযাত্রী পাঠানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রায় ১৫০ জন মোনাজেম (হজ গাইড/প্রতিনিধি) সৌদিতে রয়েছেন। দেশে আসার পর তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী যাত্রীদের সৌদি পাঠানো হবে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত বিমান ৩৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। যাওয়ার সময় মোট ১১২টি স্লট আছে। তিনি বলেন, প্রথম দফায় লিজিং কোম্পানি ঈগল এক্সপ্রেসের মিথ্যা তথ্য দেয়ার কারণে হজের জন্য বড় উড়োজাহাজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে দ্বিতীয় দফায় এয়ারক্রাফটের জন্য বিশ্বের সব উড়োজাহাজ কোম্পানি, লিজিং প্রতিষ্ঠানের কাছে সরাসরি চিঠি দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব জমাও দিয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, হজযাত্রীর স্বল্পতার কারণে বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। সমস্যা সমাধানে হজ এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। অচিরেই এ সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি আশা করেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.