ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিতর্কিত পেনশন সংস্কার বিল দেশটির সাংবিধানিক পরিষদের অনুমোদন পেয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ফ্রান্সজুড়ে সমালোচনা ও বিক্ষোভ সৃষ্টি করা ওই বিলের অনুমোদন দেওয়া হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, সাংবিধানিক পরিষদের অনুমোদনের ফলে খুব শিগগির এ সংস্কারকে আইনে পরিণত করা ও কার্যকরও করা সম্ভব হবে। ফ্রান্স সরকার জানিয়েছে, নতুন আইনটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে।
জনগণের অসন্তোষের মুখে পেনশনের সময়সীমা না বাড়ানোর ট্রেড ইউনিয়নগুলোর অনুরোধ উপেক্ষা করেই দেশটির শ্রমমন্ত্রী অলিভিয়া বলেছেন, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হবে।
ফ্রান্সের সরকারের দাবি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এ সংস্কার খুব প্রয়োজন। রাজকোষে যাতে আরও বেশি অর্থ আসে, সে ব্যবস্থা করেতেই প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ পেনশন পাওয়ার বয়স দু’বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, সাংবিধানিক পরিষদের অনুমোদনের খবর পাওয়ার পরইপরই ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখা গেছে। শুক্রবার প্যারিস সিটি হলের বাইরে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। তাদের অনেকের হাতে ‘ক্লাইমেট অব অ্যাঙ্গার’ লেখা ব্যানার দেখা যায়। কয়েকটি ব্যানারে ‘সংস্কার বাতিল না করলে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে’ লেখা চোখে পড়ে।
জানা যায়, পেনশন পাওয়ার বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তার এ প্রস্তাব নিয়ে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বামপন্থি ও বিরোধী নেতারা প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে মাক্রোঁর পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এমন পরিস্থিতি এড়াতে বিশেষ সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভোটাভুটি ছাড়াই সরকার বিলটি পাস করবে- এমন সিদ্ধান্ত নেন ম্যাক্রোঁ। পার্লামেন্টে এ ধরনের ঘোষণা আসার পরপরই ম্যাক্রোঁর পদত্যাগের দাবি তোলেন বিরোধীরা। অন্যদিকে, ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বিক্ষোভও জোরালো হতে থাকে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ধীরে ধীরে পুরো দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, অবসর নেওয়ার ন্যূনতম বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই সাধারণ জনগণ বিক্ষোভ করেছে। ফ্রান্সে আগে যেখানে ৪১ বছর কাজ করলেই অবসর নেওয়া যেত, কিন্তু নতুন সংস্কার কার্যকর হলে কমপক্ষে ৪৩ বছর কাজ করার পর পুরো পেনশন পাওয়া যাবে। না হলে কেটে নেওয়া হবে তহবিলের কিছু অংশ।
এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ফ্রান্সের বেশিরভাগ মানুষই সংস্কার পরিকল্পনার বিরোধী। তাছাড়া সরকার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি না করেই বিলটি পাসের যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটির বিপক্ষেও বেশিরভাগ মানুষের অবস্থান। কিন্তু দেশটির সাংবিধানিক পরিষদ বলছে, সরকারের এ পরিকল্পনা সংবিধানসম্মত।
একইসঙ্গে পেনশন সংস্কার প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের জন্য বিরোধীরা যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা প্রত্যাখ্যান করেছে সাংবিধানিক পরিষদ। এতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও তার সরকারের।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা