গত ১ মে কলম্বিয়ায় এক প্লেন দুর্ঘটনার পর থেকে চার শিশুসহ মা ও পাইলট নিখোঁজ ছিলেন। ঘটনার ১৬ দিন পর বুধবার (১৭ মে) দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ঐ চার শিশুর বেঁচে থাকার তথ্য জানিয়ে টুইট করেন। খবর বিবিসির।
তবে এ তথ্য জানানোর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে টুইটটি মুছে ফেলেন প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো। তিনি জানান, শিশুদের খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে আর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই প্রকৃতপক্ষেই শিশুদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে কি-না সেটি আপাতত বলা যাচ্ছেনা।
শিশুদের উদ্ধারে কাজ করে যাওয়া সার্চ টিম অবশ্য জঙ্গলে শিশুদের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের পাশাপাশি একটি অস্থায়ী আবাস খুঁজে পেয়েছে। এ থেকে উদ্ধারকারী দল ধারণা করছে, শিশুরা হয়তো বনে সাহায্যর জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে।
১১ মাস, ৪ বছর, ৯ বছর ও ১৩ বছর বয়সের এ চার শিশু তাদের মা, এক পাইলট ও কো-পাইলটের সাথে বিমানে যাত্রা শুরু করে।
শিশুদের তথ্য জানিয়ে লেখা টুইট মুছে ফেলার প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো বলেন, “আমি টুইটটি মুছে ফেলেছি কেননা কলম্বিয়ার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার এজেন্সি শিশুদের সম্পর্কে যে খোঁজ আমাদের দিয়েছিল সেটি পরবর্তীতে আর নিশ্চিত করা যায়নি। এ ঘটনার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সশস্ত্র বাহিনী ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা শিশুদের উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।”
অন্যদিকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার এজেন্সি এক বিবৃতিতে জানায়, মাঠ পর্যায়ের ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র’ থেকে শিশুদের সুস্থভাবে উদ্ধারের খবরটি জানানো হয়েছে। এমনকি উদ্ধারকারী ব্যক্তিরা শিশুদের যে বিবরণ দিয়েছে সেটি নিখোঁজ শিশুদের সাথে মিলে যায়।
এজেন্সির ডিরেক্টর অস্ট্রিড ক্যাসেরেস জানান, “খবর পেলেও আমরা এখনো শিশুদের দেখা পাইনি। তাই উদ্ধার অভিযানও বন্ধ করা হয়নি।”
এজেন্সি ছাড়াও দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটির কোম্পানি ‘অ্যাভিয়ানলাইন’ এর আরেক পাইলট জানান, তিনিও স্থানীয় ‘দুমার’ নামের একটি দুর্গম অঞ্চল থেকে রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে শিশুদের উদ্ধারের তথ্য পেয়েছেন। শিশুদেরকে নদীপথে নৌকা করে ‘ক্যাচিপোরো’ এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে নদী উত্তাল থাকায় হয়তো তারা পৌঁছাতে পারছেন না।
অন্যদিকে উদ্ধারকারী দল এখনো শিশুদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কোনো সন্ধান পায়নি। এক্ষেত্রে উদ্ধার অভিযানে প্রতিকূল আবহাওয়া ও কঠিন ভূপ্রকৃতি বেশ বাধার সৃষ্টি করছে।
‘দ্য সিসনা ২০৬’ নামের ছোট আকারের বিমানটি অ্যামাজনের আরারাকোয়ারা থেকে সান হোসে ডেল গুয়াভায়ার অঞ্চলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। নিখোঁজের আগে পাইলট বিমানটির ইঞ্জিন সংক্রান্ত জটিলতার কথা জানান।
নিখোঁজের দীর্ঘ ১৪ দিন পর প্রায় ১০০ জন সৈন্যর প্রচেষ্টায় ক্যাকুয়েটা প্রদেশের বনে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে পাইলট, কো-পাইলট ও ৩৩ বছর বয়সী মা ম্যাগডালেনার মরদেহ শনাক্ত করা হয়।
কিন্তু ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে শিশুদের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
তবে তাদের ব্যবহৃত পানির বোতল, চুলের ব্যান্ড ও খাওয়া ফলমূলের উচ্ছিষ্টাংশ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও খড়কুটো ও গাছের ডালপালা দিয়ে তৈরি করা একটি আশ্রয়স্থলের খোঁজও তারা পেয়েছেন।
শিশুরা যাতে আরও গভীর জঙ্গলে চলে না যায় তাই সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারে করে অডিও বার্তা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের বোধগম্য ‘হুইটোটো’ মাতৃভাষায় তাদের দাদীর কণ্ঠে রেকর্ড করা বার্তার মাধ্যমে তাদেরকে খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিক সেদিক না যেয়ে একজায়গায় স্থির থাকতে বলা হচ্ছে তাদেরকে।
অন্যদিকে নিজের সন্তানদের ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তাদের বাবা। স্থানীয় কারাকোল রেডিওতে তিনি বলেন, “তার বোনও একবার বনে হারিয়ে গিয়েছিল। প্রায় ১ মাস লড়াই করে তিনি ফিরে আসতে পেরেছিলেন।”
হুইটোটো গোষ্ঠীর মানুষদের বনে লড়াই করে বেঁচে থাকার দক্ষতা বেশ ভালো বলে মনে করা হয়। আর তাই এই নিখোঁজ শিশুরাও বেঁচে ফিরতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছে উদ্ধার কাজে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।