দেশকে উন্নত করতে হলে আওয়ামী লীগকেই দরকার: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে দেশকে উন্নতি করতে হলে আওয়ামী লীগকেই দরকার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার পতনের আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাতো অনেক রকমের কথা শুনি। আজকেই সরকার ফেলে দেবে। কালকেই এটা করবে, ওইটা করবে। আজকে যে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে মর্যাদা পেলাম, এটা আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে এটা বাস্তবায়ন করবে কে? আমাকে একটা লোক দেখান যে, সে করতে পারবে। নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে। একটি মানুষ দেখান। সেরকম কোন নেতৃত্ব আপনারা যদি দেখাতে পারেন আমার কোন আপত্তি নাই। আমরা জানি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে দেশকে উন্নতি করতে হলে আমাদেরকেই দরকার।

আজ রোববার সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রতি এটাই বলবো বার বার আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, দেশের সেবা করতে পেরেছি। দেশকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যেতে পেরেছি। দারিদ্রের হার কমাতে পেরেছি। আজকে বেকারত্বের সংখ্যা মাত্র তিনভাগ। ডিজিটাল পদ্ধতি হয়েছে। ৬ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছে। তারা ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করছে। আমরা পিছিয়ে থাকব না। আমরা এগিয়ে যাব। সময়ে কালোমেঘ দেখা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কঠিন সময়ের মধ্যে এবারের বাজেট দেয়া হয়েছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বিশ্বে বেড়েছে। যার আঘাত বাংলাদেশেও লেগেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশন কাউন্টার স্যাংশনের কারণে অনেক অর্থনৈতিক উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমরা বাজেট দিতে পেরেছি সেটাই সব থেকে বড় কথা।

জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা দেশ পরিচালনা করে এ বাজেট দিতে পারছি। এ বাজেটটি আমাদের মেয়াদের ১৫তম এবং চলতি মেয়াদের শেষ। কারণ নির্বাচন এ বছরেরই শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে হবে। কাজেই এটা আমাদের শেষ বাজেট। তবে একেবারে শেষ কী না সেটা বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সিদ্ধান্তের দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণকেই আমি দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাজেট নিয়ে অনেক বিজ্ঞজন নানা ধরনের মতামত দিয়েছেন। নানা ধরনের কথা বলেছেন। অনেকে সংস্কারের কথা বলেছেন। আলোচনা-সমালোচনা যাই করুক না কেন বাজেট নিয়ে যে তারা চিন্তা করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আগামী বছরের বাজেট নিয়ে যারা মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

এবারের বাজেটকে অনেকেই উচ্চবিলাসী বলেছে বলে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, অনেকেই বলছে এটা বাস্তবায়ন যোগ্য না। এ কথাগুলো সবসময় শুনে থাকি। কিছু লোক আছে সবকিছুতে নেতিবাচক কথা বলা অভ্যাস। তারা কোন কিছুই ভালো চোখে দেখে না। সেটা দেশের জন্য দুর্ভাগ্য। আমি এইটুকু বলতে পারি তারা হয়তো গ্রামে কখনো যায়নি, দেখেনি গ্রামের অবস্থা। আমাদের দারিদ্র্যতার হার গ্রামে হ্রাস পেয়েছে। শহরে হয়তো কিছুটা আছে। গ্রামের মানুষের কষ্ট তেমন নেই।

আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জনগণের উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেই আমরা বাজেট দিয়েছি। আমদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে স্বাবলম্বী করা। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পর মুখাপেক্ষী হতে চাই না। ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে দেশ হিসাবে থাকতে চায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশি মূল্যের পণ্য কিনতে গিয়ে আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। টাকার মান কমে গেছে। আমাদের প্রচেষ্টা করেছে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসারে নারীরা যে কাজ করেন এটা কিন্তু বিরাট কর্মক্ষেত্র। এটা কিন্তু হিসাবে নেয়া হয় না। এটা হিসাবে নেয়া হলে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক অগ্রগামী হতো। সেটা বাদ রেখে হিসাব হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে বলবো আগামীতে যেন গৃহস্থালি কাজকেও হিসেবে নেন। কারণ সেখানেও কিন্তু নারীরা উৎপাদনমুখী কাজ করেন।

তিনি বলেন, আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করবো। আমরা সেই কাজ শুরু করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশের ৪টি স্তম্ভ চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গর্ভমেন্ট ও স্মার্ট ইকোনমিক। আমরা পরনির্ভরশীল থাকতে চাই না। আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। আত্মমর্যাদাশীল হতে চাই। এজন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে বলেও মনে করে শেখ হাসিনা।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.