প্রবাসী বাংলাদেশীরা এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। মার্চে এসেছিল ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
রমজান ও ঈদুল ফিতরকে ঘিরে প্রবাসীরা দেশে থাকা স্বজনদের জন্য বেশি অর্থ পাঠান। কিন্তু এবার রোজায় ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যায়। মার্চে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে উল্টো কমে যায়। তবে গত ১১ এপ্রিল দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯১১ কোটি বা ১৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসীরা ১৭ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্সে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির মাধ্যমে। এপ্রিলেও ব্যাংকটি এ ধারা ধরে রেখেছে। গত মাসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫৪ কোটি ১২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে আসে, যা মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।
চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় বিপর্যয় হয়েছিল। বিশেষ করে গত আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬০ কোটি ডলার। আর সেপ্টেম্বরে সে প্রবাহ ১৩৩ কোটি ডলারে নেমে যায়। মূলত ডলারের বিনিময় হার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর হওয়ায় রেমিট্যান্সে বড় পতন হয়। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিময় হার নিয়ে উদার হলে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ফিরে আসে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ছাড়া দেশের প্রধান সব শ্রমবাজার থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ইউএই থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৭ কোটি ৭ লাখ ডলার। একই সময়ে প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে মাত্র ১৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থাৎ সৌদি আরবের সঙ্গে আমিরাত থেকে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহের ব্যবধান ৬০ শতাংশেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শীর্ষ রেমিট্যান্সের বাজার হিসাবে আরব আমিরাত তার নাম ধরে রেখেছে।
সৌদি আরবের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় বিপর্যয় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশটি থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৯৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেকর্ড ৩৫২ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এর আগের তিন বছরও প্রবৃদ্ধির ধারায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহ। রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপর্যয় হওয়ার কারণে শীর্ষস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম চতুর্থে নেমে গেছে। সৌদি আরবের নাম নেমেছে তৃতীয় স্থানে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের নাম। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, সিঙ্গাপুরসহ বড় শ্রমবাজারগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ এখন বেশ শ্লথ।
রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলেও গত দুই বছরে প্রধান শ্রমবাজারগুলোয় রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক অভিবাসী হয়েছেন। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে রেকর্ড ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন বাংলাদেশী জীবিকার সন্ধানে অভিবাসী হয়েছেন। এর আগে ২০২২ সালে অভিবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। অর্থাৎ গত দুই বছরে ২৪ লাখের বেশি বাংলাদেশী কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ গেলেও রেমিট্যান্স সে অনুপাতে বাড়েনি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আরো ২ লাখ ৩৬ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশ গেছেন।