পেসমেকার বসানো হলো খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়েছে। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ ফুসফুস, লিভার ও কিডনির নানা জটিলতায় ভুগছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে ব্লক ছিল, একটা স্টেন্টও লাগানো ছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে এখন মেডিকেল বোর্ড তার হার্টে পেসমেকার লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়েছে। পেসমেকার হলো হৃৎস্পন্দন নিয়মিত রাখার কৃত্রিম বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা বৈদ্যুতিক স্পন্দন তৈরি করে হৃৎপেশিতে পাঠায় এবং হৃৎপিণ্ডের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যখন হৃৎপিণ্ডের নিজস্ব পেসমেকার বা এসএ নোড যথেষ্ট পরিমাণে বা গতিতে ইমপালস তৈরি করতে না পারে বা হৃৎপিণ্ডের তড়িৎ পরিবহনের রাস্তা আটকে যায়, তখন হৃৎপিণ্ডের গতি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হলো পেসমেকারের প্রাথমিক কাজ, যাতে হৃৎপিণ্ড ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থার খোঁজখবর নিতে এদিন এভারকেয়ার হাসপাতালে যান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি দীর্ঘক্ষণ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি ঘণ্টা খানেক অবস্থান নেন। তিনি মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. জাফর ইকবালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। এ সময় তার সঙ্গে দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা সরকার করছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিলে এমন অভিযোগ করেন দলের মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে রাখা এবং হত্যার জন্য খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্টে বারবার বলা হয়েছে, ম্যাডামের যে অসুখ এর চিকিৎসা এ দেশে করা সম্ভব নয়। তার চিকিৎসার জন্য উন্নত দেশ, উন্নত মানের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আমরা দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বলেছি। কিন্তু সরকার খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না।’

এর আগে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মূলত গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গত ১১ জানুয়ারি তিনি বাসায় ফেরেন। সে সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে তার পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এমন পরিপ্রেক্ষিতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে এ অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পর তাকে বাসায় নেয়া হয়েছিল। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.