বিশেষ প্রতিনিধি : বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট মাঝ পথ থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম শুক্রবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটের উড়োজাহাজটি সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে যাত্রা শুরু করে।
“সকাল ৯টা ৬ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে রওনা হয় লন্ডনের উদ্দেশে। কিন্তু হিথ্রো বিমানবন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সেটি দুপুর পৌনে ২টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে ফেরত আসে।”
কামরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় অবতরণের পর যাত্রীদের একটি হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। লন্ডনের ওই ফ্লাইটে পাইলট ও কেবিন ক্রুসহ ২৬৭ জন আরোহী রয়েছেন।
বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে শুক্রবার সারাদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় হিথ্রো বিমানবন্দর। বিবিসি খবর দিয়েছে, বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হিথ্রো কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই কেন্দ্র থেকেই বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হত। ফলে অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দরে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। হিথ্রোর একজন মুখপাত্র বলেন, “বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে তা আমরা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন।”
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডনের স্টেশন ম্যানেজারের বরাত দিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, “সেখানকার ব্যবস্থাপক হিথ্রো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স পেলেই যাত্রা শুরু হবে।”
বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, “লন্ডনে যে ফ্লাইট যাচ্ছিল, সেটা মাঝপথ থেকে ফেরত এসেছে। কারণ সেখানে ফ্লাইট ওঠা-নামা এখন বন্ধ। পরিস্থিতি ঠিক হলে আমরা আবার যাত্রা শুরু করব।”
এদিকে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে শুক্রবার সারাদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর। বিমান বন্দর সংলগ্ন একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় সাময়িক এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ওই কেন্দ্র থেকেই বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। হিথ্রো কর্তৃপক্ষ বলেছে, অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দরে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতির জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, “যাত্রী এবং আমাদের কর্মীদের সুরক্ষায় হিথ্রো ২১ মার্চ ২৩.৫৯ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। যাত্রীদেরকে বিমানবন্দরে না আসতে এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে তাদের সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
হিথ্রোর একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। “বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন,” বলেন তিনি। পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের বিমানবন্দরে আসা উচিত না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় এই বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১৩০০ ফ্লাইট ওঠানামা করে। গত বছর রেকর্ড ৮ কোটি ৩৯ লাখ যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন।
বিবিসি বলেছে, পশ্চিম লন্ডনের হেইয়েসে অবস্থিত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটিতে অগ্নিকাণ্ডের কারণে শুধু হিথ্রোই নয়, কয়েক হাজার বাড়িও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর কেন্দ্রটির আশপাশ থেকে অন্তত ১৫০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আগুন নেভানোর জন্য দশটি গাড়ি এবং ৭০ জন কর্মীকে সেখানে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড (এলএফবি)। নিরাপত্তাজনিত কারণে ঘটনাস্থলের চারপাশে ২০০ মিটার এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে এবং মারাত্মক ধোঁয়া হতে এমন শঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দারকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্কটিশ অ্যান্ড সাউদার্ন ইলেকট্রিসিটি নেটওয়ার্কস ‘এক্স’ বার্তায় বলেছে, অগ্নিকাণ্ডের কারণে ১৬ হাজার ৩০০ বাড়ি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
“হেইয়েস, হাউন্সলো এবং আশপাশের এলাকায় গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংকটে পড়ার বিষয়ে আমরা সজাগ আছি,” বলা হয়েছে বার্তায়।
লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড বলছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের দিকে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে আগুন লাগার পর তারা অন্তত ২০০ ফোন কলে পেয়েছে। রাত প্রোয় সাড়ে ১১টার দিকে জরুরি বিভাগকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি।
“এটি একটি বড় ঘটনা। আমাদের কর্মীরা যত দ্রুত সম্ভব আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে,” বলেছেন এলএফবির সহকারী কমিশনার প্যাট গলবর্ন।
তিনি বলেন, “লম্বা সময় (আগুন নিয়ন্ত্রণে) লাগতে পারে এবং আমাদের কর্মীদের সারারাত সেখানে থাকতে হতে পারে। সকালের দিকে সমস্যা আরও বাড়তেও পারে। যতটা সম্ভব ওই এলাকা এড়িয়ে চলতে আমি সবাইকে অনুরোধ করছি।”