এভিয়েশন নিউজ: হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে ভিআইপি গেট ব্যবহার করে বিদেশ যাওয়ার সময় মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় কারাদণ্ড প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের স্ত্রী ও ভাতিজার বিদেশ যাওয়া নিয়ে তোলপাড় উঠেছে। বুধবার সন্ধ্যায় সৌদি আরব যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তারা। এরপর মুসলেকা নিয়ে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। বুধবার সন্ধ্যায় তাদেরকে শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। এদিকে ভিআইপি না হয়েও ভিআইপি গেট ব্যবহার করে বিদেশ যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়েছে। জানাগেছে তথ্য গোপন করে সরকারি একজন কর্মকর্তার ,মাধ্যমে তারা ভিআইপি পাস নিয়েছিলেন। এরপর লোক চক্ষুর অন্তরালে বিদেশ চলে যাওয়ার সবকিছু পাকা করেছিলেন। এই ঘটনায় সিভিল এভিয়েশনরে সদস্য অপারেশনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হযেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও নিজ উদ্যোগে বিষয়টি তদন্ত করছে। একই সঙ্গে বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে তদন্ত করছে বিমান বন্দর আর্মড পুলিশ (এপিবিএন)।
হযরত শাহজালাল (র.) আন্তজাতিক বিমান বন্দরে কর্মরত এপিবিএনের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল জানান, গোলাম আযমের বেয়াইন গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রনালয়ের সাবেক (এলপিআরএ থাকা) এডিশনাল প্রধান প্রকৌশলী দেলেনা বেগম তার দুই জন আÍীয়কে বিদায় দেয়ার জন্য ভিআইপি পাশ নেন। তিনি তাদেরকে বিদায় জানাতে বিমান বন্দরে যান। এসময় ভিআইপি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ গোলাম আজমের স্ত্রী আফিফা আজমের পরিচয় পেয়ে আটকে দেয়।
দেলেনা বেগম সম্পর্কে জানা গেছে তিনি গোলাম আযমের ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আযমীর শ্বাশুড়ি। তাদেরকে আটকানোর সময় দেলেনা বেগম ছাড়াও বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন আযমীর স্ত্রী তাসনীম আঞ্জুম।
বিমান বন্দর ইমিগ্রেশেনের দায়িত্বরত ওফিসার ইনচার্জ ও এসএস ইমিগ্রেশনের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, মানবতা বিরোধী অপরাধের দণ্ডপ্রাপ্তদের আÍীয় স্বজনদের দেশত্যাগে কোন নিষেধাজ্ঞার নোটিশ তাদের জানা নেই। তবে নির্দিষ্ট কারো নামে নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে। সেটা পাসপোর্ট নম্বর না পেলে বলা সম্ভব নয়।
ইমিগ্রেশনের অপর একজন কর্মকর্তা জানান, আফিফা আজম পরিচয় গোপন করে ভিআইপি গেট ব্যবহার করায় তাকে আটকানো হয়েছে। পরে তাদেরেক মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। আফিফা আজম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবির সৌদি আরবে উমরাহ হজ্ব করতে যাওয়ার কথা ছিলো। পরে মুচলেকা রেখে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেলেনা বেগম অতিরিক্ত সচিব পদপর্যাদার একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি ভিআইপি পাশ ব্যবহার করতে পারেন। পাশ নেয়ার সময় তিনি নাম উল্লেখ না করে প্লাস-টু লেখেন। এটা বিধি সম্মত কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, এবিষয়ে আইনগত দিক থেকে কোন বিধি নিষেধ নেই।
এ প্রসঙ্গে শাহজালাল (র.) আন্তজাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক গ্র“প ক্যাপ্টেন জাকির হাসান জানান দেলেনা বেগম নামে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তথ্য গোপন করে তিনি সহ দুই জনের নামে ভিআইপি পাস নিয়েছিলেন। এভাবে তথ্য গোপন করে ভিআইপি পাস নিয়ে তিনি অন্যায় করেছেন। কেন তিনি তথ্য গোপন করে ভিআইপ পাস নিলেন সে বিষয়ে তারা তদন্ত করে দেখছেন। জাকির হাসান বলেন, পাস নিতে দেলেনা বেগম সিভিল এভিয়েশনকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে নিজের পরিচয় ছাড়া অন্য কারো নাম ব্যবহার করেননি। চিঠিতে বিদেশগামী তাঁর দুই আত্মীয়কে বিদায় জানাতে তিনিসহ তিনজনের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতি চান। পরিচালক শাহজালাল বলেন, একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যার কেউ ভিআইপি পাসের জন্য চিঠি দিলে অবশ্যই তাকে পাস দিতে হবে। সঙ্গে থাকা দুই আÍীয়ের পরিচয় আগে থেকে জানতে কিনা জানতে চাইলে গ্র“প ক্যাপ্টেন জাকির হাসান জানান, তাদের কাউকেই তিনি চিনতেন না। সাধারণত কোন ভিআইপি‘র চিঠি নিয়ে এভাবে কোয়ারী করাও হয় না। তবে যেহেতু এধরনের ঘটনা ঘটেছে ভবিষ্যতে যাতে এর পুণরাবৃত্তি না হয় সেজন্য এখন থেকে সবার নাম ঠিকানা ও পরিচয় জেনে তারপর পাস ইস্যু করা হবে। পরিচালক শাহজালাল জানান, ঘটনার দিন দেলেনা বেগম তার দুই আÍীয়কে নিয়ে ভিআইপ লাউঞ্জ ব্যবহার করেন। পরে অভিবাসন পুলিশ পাসপোর্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে জানতে পারেন যে তাঁদের একজন গোলাম আযমের স্ত্রী। বিষয়টি তাৎক্ষনিক তাকে জানানো হয়। এসময় তিনি সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে একটি মিটিংয়ে ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি চেয়ারম্যানের নির্দেশে দ্রুত বিমান বন্দরে ছুটে যান। ততক্ষনে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের পাসপোর্ট আটকে দিয়েছে। এরপর যুগ্ম সচিব দেলেনা বেগমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দু:খ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে ভিআইপি পাস নিয়েছিলেন বলে মুসলেকা দেন। এসময় বিমান বন্দরে কর্মরত ডিজিডিএফআই, এনএসআই, এপিবিএনসহ সব সংস্থার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সবার সামনেই দেলেনা বেগম নিজের দোষ স্বীকার করে মুসলেকা দেন এবং দু:খ প্রকাশ করে ভবিষতে এধরনের কোন কাজ করবেন না বলে জানান। জাকির হাসান জানান, বিষযটি নিয়ে সিভিল এভিয়েশনের সদস্য অপারেশনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। ওই কমিটি যুগ্ম সচবের দেয়া মুসলেকা দেখেছেন। তার কাছ থেকেও বিস্তারিত শুনেছেন। ওই সময় উপস্থিত থাকা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
সিভিল এভিয়েশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সাধারণত উর্ধতন কোন সরকারি কর্মকর্তার ভিআইপি পাসের জন্য দেয়া চিঠি নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন করা হয় না। যে কারণে দেলেনা বেগমের ভিআইপি পাস দেয়া হয়েছিল। পরিচালক জাকির হাসান সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা জানান, তিনি এয়ারপোর্সের একজন গ্র“প ক্যাপ্টেন। প্রেষনে শাহজালাল বিমান বন্দরের পরিচালক পদে আসেন। তার যোগদানের পর থেকে বিমান বন্দরের অনিয়ম-দুনীতি অনেক কমে গেছে। তার আমলে বিমান বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের তুলণায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বিরোধী জোটের আন্দোলন চলাকালে শাহজালাল বিমানবন্দরকে ঘিরে বেশ কিছু নাশকতার হুমকী আসলেও তার শক্তিশালী পদক্ষেপের কারণে কেউ কোন ধরনের নাশকতা ঘটাতে পারেনি। একারণে খোদ বিমান বন্দরেরই একটি দুনীুিতবাজ সিন্ডিকেট তার বিরুদ্ধে লেগে আছে। সম্প্রতি একের পর এক সোনা আটকের ঘটনায়ও গ্র“প ক্যাপ্টেন জাকির হাসানের শক্তিশালী ভুমিকা রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একাধিক সদস্য জানান। জানাগেছে চোরাচালান চক্রের সদস্য ও ভুয়া পাস নিয়ে বিমান বন্দরে প্রবেশকারী একটি চক্রের কতিপয় সদসের বিরুদ্ধে সম্প্রতি কঠোর অ্যাকশনে গিয়েছিলেন গ্র“প কাপ্টেন জাকির হাসান। বাতিল করেছিলেন শতাধিক ভুয়া পাস। তিনি বলেন, এসব ভুয়া পাসধারী ব্যক্তিরা অবাদে গ্রীন চ্যানেল পর্যন্ত ঢুকে যায়। তাদের সঙ্গে চোরাচালান চক্রের সম্পৃক্ততা রযেছে। লাগেজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এই চক্রটি প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার চোরাচালান করছে। সোনা চোরাচালানীদের সঙ্গেও এদের যোগসাজস আছে। পরিচালক গ্র“প ক্যাপ্টেন জাকির হাসান বলেন, এসব ভুয়া পাস ধারী ব্যক্তিদের পাস বাতিল ও ভিআইপি পাস ইস্যু নিয়ে তারা নতুন করে চিন্তা ভাবনা করছেন। যাতে কেউ এর অপব্যবহার করতে না পারে।
আরও খবর