ড্রোন যেভাবে একটি অতি ব্যস্ত বিমানবন্দর অচল করে দিল।
মাত্র কয়েকটি ড্রোনের কারণে ব্রিটেনের অত্যন্ত ব্যস্ত একটি বিমানবন্দর দুদিন ধরে বন্ধ ছিল। গ্যাটউইক বিমানবন্দরে বাতিল করা হয়েছিল শত শত ফ্লাইট। হাজার হাজার যাত্রীকে তাদের ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পর মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
বুধবার প্রথম গ্যাটউইক বিমানবন্দরের ওপর প্রথম একটি ড্রোন উড়তে দেখা গিয়েছিল। এরপর দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে বিমানবন্দরের রানওয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। গত দুদিন ধরে সেখানে কয়েকটি ড্রোনের রহস্যজনক ওড়াওড়ি ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী পর্যন্ত তলব করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কে বা কারা এই ড্রোন ওড়াচ্ছিল সেই রহস্য এখনো ভেদ করতে পারেনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।
কীভাবে মাত্র কয়েকটি ড্রোন ব্রিটেনের বিমান পরিবহন ব্যবস্থায় এরকম মারাত্মক বিপর্যয় তৈরি করতে পারলো? ড্রোন আসলে কী ধরণের ঝুঁকি তৈরি করে?
ড্রোন কী?
ড্রোন কথাটা শুনলেই মনে ভেসে উঠে আকাশ থেকে সামরিক হামলা চালানোর ছবি। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে যে ধরণের অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহার করা হয়, তার সঙ্গে ব্রিটেনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ড্রোনের অনেক তফাৎ রয়েছে।
যেসব অসামরিক ড্রোন এখন খেলনার দোকানে বা অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো আকারে বেশ ছোট। এগুলো আসলে এক ধরণের কোয়াড-কপ্টার। রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মূলত শখের বসে বা ছবি তোলার কাজে ব্যবহৃত হয় এসব ড্রোন।
মাত্র ৫০ ডলার থেকে শুরু করে কয়েক হাজার ডলার দামেরও ড্রোন আছে। নির্মাণ শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও এখন ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিমানের কী ক্ষতি করতে পারে ড্রোন
২০১৭ সালের অক্টোবরে কানাডায় একটি বাণিজ্যিক বিমানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল একটি ড্রোন। বিমানটির একটি ডানায় আঘাত করেছিল এটি। এতে বিমানটির সামান্য ক্ষতি হয়, তবে এটি নিরাপদে অবতরণ করতে পেরেছিল।
ড্রোন কোন উড়ন্ত বিমানের কী ধরণের ক্ষতি করতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা এখনো পর্যন্ত খুব কম। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাস্তবে এ নিয়ে যেসব পরীক্ষা চালিয়েছে, তাতে তারা আসলে নানা ধরণের উপসংহারে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ডেটন এরকম একটি গবেষণা চালিয়েছিল। প্রায় ২৩৮ কিলোমিটার বেড়ে চলতে থাকা একটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের সঙ্গে এক কেজি ওজনের একটি ড্রোনের মধ্য আকাশে সংঘর্ষ হলে কী হতে পারে, সেটি দেখানো হয়েছিল এই পরীক্ষায়। তাদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এতে উড়োজাহাজের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
এ ধরণের আরেকটি গবেষণা চালায় অ্যালায়েন্স ফর সিস্টেম সেফটি অব আনম্যান্ড এয়ারক্রাফ্ট সিস্টেম থ্রু রিসার্চ এক্সসেলেন্স (অ্যাসিউর) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি। তাদের গবেষণা বলছে, কোন পাখি যদি কোন উড়োজাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খায়, তাহলে যে ক্ষতি হবে, ড্রোনের ধাক্কায় তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হতে পারে। আর এই সংঘর্ষে ড্রোনটির লিথিয়াম ব্যাটারি থেকে আগুন ধরে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে।