বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। আর এ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে খোদ রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দ্বারা। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের মাত্রা আগের বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগের বছর ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে নির্যাতনের মধ্যে ২৩ ভাগই হয়েছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দ্বারা।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা নিয়ে ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ-২০১৪’ শিরোনামের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘আর্টিকেল ১৯’ নামের একটি সংগঠন। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে ১১ শতাংশ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৬৬ দশমিক ৩১ ভাগ। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে ৩৩ দশমিক ৬৯ ভাগ ঘটনা ঘটেছে।
তাহমিনা রহমান বলেন, এমন নির্যাতন সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য হুমকি। ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে সাংবাদিকদের ওপর হয়রানির পরিমাণ বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। এ হয়রানির মধ্যে রয়েছে মানহানি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা। এ ছাড়া ২০১৪ সালে মোট ২১৩ জন সাংবাদিক ও আটজন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন ৪০ জন। আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২ জন সাংবাদিক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ ১৩ জন মিডিয়াব্যক্তিত্বকে আদালত অবমাননার অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান প্রমুখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর অযাচিত আক্রমণ, সহিংস ঘটনার বিচারিক তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি গণমাধ্যমের কর্মীদের জন্য চরম বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য একটি কার্যকর সুরক্ষা কৌশল ও নীতিমালা করার সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ছাড়া ওই প্রতিবেদনে তথ্যপ্রযুক্তি আইন, মানহানি ও আদালত অবমাননা-সংক্রান্ত আইনকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা।