সংলাপ হয়ে গেল শুভেচ্ছা বিনিময়ঃ ওবায়দুল কাদের।
রাজনৈতিক দলগুলোকে গণভবনে নির্বাচন-পরবর্তী ‘সংলাপে ডাকার’ খবর দেয়ার একদিন পরই উল্টো খবর দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংলাপ নয়, শুধু শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকা হবে।
অথচ রোববার আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের আগে যেসব দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে, তাদের আবারও চিঠি দিয়ে সংলাপে ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। ঐক্যফ্রন্ট ইতিমধ্যে সংলাপে বসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নতুন করে সংলাপের উদ্যোগকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ড. কামাল। একই সঙ্গে আমন্ত্রণ পেলে সেই সংলাপে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ডাকবেন সংলাপে, একটু তো ইঙ্গিত থাকবে কী কী বিষয় নিয়ে এ সংলাপ। যদি সেটা আমাদের কাছে বিবেচনাযোগ্য হয়, তখন আমরা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেব এ ব্যাপারে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সংলাপের আমন্ত্রণ এলে তাতে সাড়া দেবেন কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নীতিগতভাবে আমি একে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করব। কিন্তু সেটা জানতে হবে কী প্রেক্ষাপটে এটার আয়োজন করা হচ্ছে, কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এদিকে সোমবার বিএনপির মহাসচিব সিলেটে বলেছেন, সংলাপের এজেন্ডায় ‘নতুন নির্বাচন’ বিষয়টি থাকলে তারা সেখানে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে বসা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যখন নানা আলোচনা চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে ওবায়দুল কাদের শোনালেন ভিন্ন কথা।
সোমবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল। নির্বাচন-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য চিঠি দিয়ে আবারও তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর সেটা শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য। এখানে কোনো সংলাপ নয়। কোনো সংলাপের আমন্ত্রণ আমরা জানাচ্ছি না।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো বিষয় নেই। যেই নির্বাচন নিয়ে সারা বিশ্বের কোথাও কোনো সংশয় নেই, গণতান্ত্রিক বিশ্ব উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন নিয়ে কোনো সংলাপ নয়।
সংলাপ না হলে গণভবনে দলগুলোকে কেন ডাকা হবে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য। কোনো সংলাপের আমন্ত্রণ আমরা জানাচ্ছি না।
এর আগে রোববার দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় সংলাপ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ঐক্যফ্রন্ট-যুক্তফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণভবনে সংলাপ হয়েছিল। এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা শনিবার ওয়ার্কিং কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকে বলেছেন, যাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে তাদেরকে আমন্ত্রণ করবেন। কাদের বলেন, দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিছু মতবিনিময় করবেন। এতে তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। এ ব্যাপারে আমরাও সবাই একমত, যারা সংলাপে এসেছিলেন তাদেরকে আবারও নেত্রী সংলাপে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। একসঙ্গে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এ সংলাপ হতে পারে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, সেটা খুব শিগগির জানিয়ে দেয়া হবে।
সব রাজনৈতিক দল গণভবনে আমন্ত্রিত। ঐক্যফ্রন্ট আছে, যুক্তফ্রন্ট আছে, ১৪ দল আছে, জাতীয় পার্টি আছে, অন্য যেসব দল আছে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এসব কথা বলার একদিন পরই বক্তব্য পরিবর্তন করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কারও সঙ্গে সংলাপ নয়, শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত : ১৯ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নিজেদের ভেতরে সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। এই মহানগরে আছে, সারা দেশে দুর্বলতা আছে। সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে দলকে সুসংগঠিত করা। বিজয়কে সংহত করতে হলে, ঘর গোছাতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, দলকে সুসংগঠিত করার প্রক্রিয়া হাতে নেন। ভেতরের দুর্বলতা কটিয়ে উঠতে হবে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারি না। এত বড় বিজয়- এ জন্য যে আমাদের দুর্বলতা নেই, এটা বলতে পারি না। কারণ আমাদের ভেতরে কিছু দুর্বলতা আছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন বেশি দূরে নয় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। সামনে উপজেলা নির্বাচন। আর উত্তর সিটি নির্বাচন বেশি দূরে নয়। হাইকোর্টের আইনজীবীদের মারফত জানতে পেরেছি, উত্তর সিটি নির্বাচন বেশি দূরে নয়। তিনি বলেন, এই যে আমাদের বিশাল বিজয়, এই বিজয়ের পর এখন সরকার দল চালাবে? নাকি দল সরকার চালাবে? আমি বলতে চাই- দলই সরকার চালাবে।
বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, আগামী ১৯ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ আমাদের বিজয় সমাবেশ। এ বিজয় সমাবেশের মাধ্যমে আমরা বিজয়কে উদ্যাপন করব। এ বিজয় সমাবেশে জনতার ঢল নামবে। আগের সমাবেশগুলোর চেয়ে এবারের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মীদের প্রবেশের গেট আরও বাড়ানো হবে। মহিলাদের জন্য আলাদা গেট থাকবে। এতে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত।