মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধ রেখেছে সৌদি আরব। ওমরাহ পালন শেষে অবৈধভাবে সেখানে অবস্থান করাসহ নানা কারণে ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওমরাহ ভিসার দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ছিল। এবার ঢালাওভাবে ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ নাগরিকেরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওমরাহ করতে গিয়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশি না ফেরার অভিযোগে গত ২২ মার্চ থেকে সৌদি সরকার পুরোপুরিভাবে ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দেয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। অথচ ওমরাহ
ভিসার জন্য এর মধ্যেই হজ এজেন্সিগুলোতে বেশ কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়েছে। প্রতি বছর রমজান মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার বাংলাদেশি ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যান। সাধারণত বাংলাদেশের হজ এজেন্সিগুলো সৌদি আরবের এজেন্সির সহায়তায় বাংলাদেশের নাগরিকদের ওমরাহ পালনের ব্যবস্থা করে থাকেন। হজ এজেন্সীস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত ওমরাহ পালন করতে গিয়ে এক শতাংশ দেশে না ফিরলে সেটি সৌদি কর্তৃপক্ষ ক্ষমার চোখে দেখে। গত ডিসেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪০-৪৫ হাজার নাগরিক ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব গেছেন। গড়ে এঁদের ভিসার মেয়াদ ছিল ১৪ থেকে ২৮ দিন। ওমরাহ পালন করতে গিয়ে এঁদের মধ্যে প্রায় হাজার দেড়েক লোক দেশে ফেরেননি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কিছু লোক ওমরাহ ভিসার অপব্যবহার করেছেন বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ ঢালাওভাবে ভিসা বন্ধ রেখেছে । অন্যান্য দেশ একজন ভিসা প্রার্থীর পাসপোর্টে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। অথচ সৌদি কর্তৃপক্ষ সে প্রক্রিয়ায় না গিয়ে কোনো বিচার-বিবেচনা না করেই বাংলাদেশের নাগরিকদের ওমরাহ ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ওমরাহ পালন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের কথা বলা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, যেসব হজ এজেন্সির কারণে মাধ্যমে এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তাদের সঙ্গে হাবের নির্বাহী কমিটির যোগসাজশ রয়েছে।
হাবের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ওমরাহ ভিসার সমস্যা নিয়ে হাবের কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ অমূলক। যেসব হজ এজেন্সির কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তাদের তালিকা বের করে সদস্যপদ বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাবের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, কিছু এজেন্সির অপকর্মের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জড়িতদের খুঁজে বের করে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ, গুটিকয়েক লোকের কারণে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওমরাহ পালন থেকে বঞ্চিত করা ঠিক হচ্ছে না। সামনে পবিত্র রমজান মাস। প্রতি বছর এ সময় সবচেয়ে বেশি লোক ওমরাহ পালন করতে যান। এটি বিবেচনায় নিয়ে ওমরাহ ভিসা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
এ সমস্যার সমাধানে সরকার সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে কি না, সে সম্পর্কে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যেহেতু সৌদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে কিছু ভাবছে না।