সাগরপথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচার বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী উদ্ধার নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই পাওয়া গেছে আকাশপথে লিবিয়ায় পাচারের নতুন পথের সন্ধান। সোমবার রাতে নগরীর হালিশহর থেকে গ্রেফতার হওয়া তিন মানবপাচারকারীর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি দাবি করেছে এ চক্রটি বিমানযোগে চট্টগ্রাম থেকে লিবিয়ায় মানবপাচারের সাথে জড়িত। ইতোমধ্যে তারা প্রায় ৫০০ লোককে লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিয়েছে।
এদিকে গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১১ জন সন্দেহভাজন লিবিয়াগামীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের সাথে এ চক্রের যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিআইডি বলছে, আকাশপথে এভাবে মানব পাচারের ঘটনা আগে তাদের নজরে আসেনি। এটা মানব পাচারের নতুন একটি পথ।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, মানবপাচারে আকাশপথের এরকম ব্যবহার চট্টগ্রামে আগে কখনোই ছিল না। এটা একদম নতুন পথ। ফ্লাই দুবাই এবং এয়ার এরাবিয়ার বিমানে করে লিবিয়াগামীদের প্রথমে দুবাই পাঠানো হয়। সেখানকার বিমানবন্দরে তাদের জন্য লিবিয়ার টিকেট পাঠানো হয়। ওই বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের মুখোমুখি না হয়ে কোনোভাবে পরের টিকেটে তারা লিবিয়া যায়। সোমবার রাতে গ্রেফতার তিন মানবপাচারকারীর কাছে যে ৩৩টি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে তার ১৭টিতে লিবিয়ার ভিসা আছে।
সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে ১১ জন লিবিয়াগামীকে আটক করা হয় তাদের ভিসাও জাল বলেই ধারণা পুলিশের। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ইমিগ্রেশন) তারেক আহমেদ বলেন, ফ্লাই দুবাইয়ের একটি বিমানযোগে তারা দুবাই যাচ্ছিল। তাদের পাসপোর্টে লিবিয়ার ভিসা আছে। তবে ভিসা জাল বলে সন্দেহ হওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে। বিমানবন্দরে আটকদের সাথে গ্রেফতার তিন মানবপাচারকারীর কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে সিআইডি।
সোমবার রাতে গ্রেফতার তিনজন হলেন মো. আলী আকবর (৩৯), বাহার উদ্দিন (২৮) ও মো. শাহ বায়েজিদ উল্লাহ (২২)। তিনজনই ফেনী জেলার সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি এলাকার বাসিন্দা। নগরীর হালিশহর থানার বড়পোল এলাকায় এমডিসি পোর্ট ভিউ সুরমা টাওয়ারের ৮ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছে থাকা ৩৩টি পাসপোর্টের মধ্যে ৩০টি এমআরপি বাকি তিনটি ননএমআরপি। এরমধ্যে ১৭টিতে লিবিয়ার এবং একটিতে মিসরের ভিসা আছে। একটি সিল পাওয়া গেছে যাতে লেখা- মোজাম্বিক হাইকমিশন, নিউ দিল্লি। এছাড়া পাওয়া গেছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমানের টিকেট বুকিং-এর ১২টি স্লিপ।
সিআইডির কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, গ্রেফতার আলী আকবরের নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে একটি ট্রাভেল এজেন্সি আছে। এটির আড়ালেই সে মানবপাচারের কাজ করে। অন্য দু’জন তার সহযোগী। প্রত্যেক লিবিয়াগামীর কাছ থেকে তারা চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নেয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহার করে গত এপ্রিল মাস থেকে তারা মানবপাচার করছে বলে জানিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসহায়-দরিদ্রদের বিদেশ পাঠানোর লোভে ফেলে তারা মানব পাচার করে। এখন পর্যন্ত তারা চার থেকে পাঁচশ’ লোককে এভাবে লিবিয়া পাচার করেছে বলে ধারণা করছি।
যেসব পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে তার মধ্যে নয়জনই কুষ্টিয়ার বাসিন্দা। এছাড়া কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মাদারিপুর, যশোর, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, জামালপুর ও ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা। এ ঘটনায় নগরীর হালিশহর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৭/৮ ধারায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করবে।
লিবিয়াগামী ১১ যাত্রীকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ
সন্দেহভাজন ১১ যাত্রীর পাসপোর্ট জব্দ করে তাদের লিবিয়া যেতে দেয়নি পুলিশ। গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ফ্লাই দুবাইয়ের বিমানে দুবাই হয়ে লিবিয়া যাওয়ার কথা ছিল তাদের। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার তারেক আহমেদ বলেন, জাল ভিসা ব্যবহার করে অবৈধভাবে মানবপাচারকারীর মাধ্যমে ১১ জন যাত্রী লিবিয়া যাচ্ছিল বলে আমাদের সন্দেহ হয়। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ চেক করার সময় তাদের আটক করে। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। পরে যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নগর পুলিশের বিশেষ শাখা তদন্ত করবে। তদন্তে সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে পুলিশ।