পাইলট অভিনন্দনকে হস্তান্তরের প্রস্তুতি সম্পন্ন -সীমান্তে অধীর আগ্রহে মানুষ জন

নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে হামলা চালানোর সময় ভূপাতিত হওয়া ভারতের যুদ্ধবিমানের আটক পাইলটকে ফিরিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান।

শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছে তাকে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম ডন।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার তাদের বিমানবাহিনীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পাইলট অভিন্দনকে  ইসলামাবাদ থেকে এখন সড়কপথে নিয়ে আসা হচ্ছে লাহোরে। তাকে মুক্তি দেওয়া হবে পাঞ্জাবের ওয়াঘা-আতারি সীমান্তে। তার পর তাকে অমৃতসর হয়ে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হবে।

অভিনন্দনের মুক্তির খবর পেয়ে সকাল থেকে ওয়াঘা সীমান্তে উপস্থিত হয়েছেন কয়েকশো মানুষ। ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে সীমান্ত এলাকা। সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন মুক্তি দেওয়া হবে অভিনন্দনকে।

ইতিমধ্যেই ওয়াঘা সীমান্তে পৌঁছে গেছেন অভিনন্দনের বাবা এয়ার মার্শাল এস বর্তমান এবং মা শোভা বর্তমান। ভারতীয় বিমান বাহিনীর এবং সেনা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারও ওয়াঘা সীমান্তে পৌঁছেছেন।

পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশন অভিনন্দনের মুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কাজকর্মগুলো সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশনের অ্যাটাশে জে টি ক্রেন অভিনন্দনের সঙ্গে রয়েছেন।

ভারত-পাকিস্তানের মধে চলমান উত্তেজনা ও সংঘাতের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে হামলা চালানোর সময় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার পাকিস্তানের সীমারেখা অতিক্রম করে প্রায় ৭ কিলোমিটার ভেতরে ভূপাতিত হয় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান।

ওই বিমান থেকেই প্যারাসুট দিয়ে নেমে একটি গ্রামে প্রথমে স্থানীয় কিছু তরুণ ও পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন পাইলট অভিনন্দন।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। তবে পাকিস্তান সরকার এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এরই মধ্যে পুলওয়ামা হামলার জবাব দিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালায় ভারত। সেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর অভিযানে ৩০০ জঙ্গি নিহত হয় বলে দাবি ভারতের। তবে পাকিস্তান এই দাবিও প্রত্যাখ্যান করে।

দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের একটি এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হয়।

এরপর প্রথমে ভারতের দুইজন পাইলট এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক পাইলটকে আটকের কথা জানায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এক ভিডিওতে পাইলট অভিনন্দনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা গেলেও পরের ভিডিওতে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় চা পান করতে দেখা যায়।

ওইদিনই বিকেলে টেলিভিশনে কথা বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এসময় তিনি পুলাওয়ামাকাণ্ড নিয়ে পাকিস্তান যদি কোনওভাবে জড়িত থাকে তার তদন্ত করা হবে জানিয়ে ভারতের উদ্দেশে বলেন, আসুন আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা সমাধান করি।

দুই দেশের উত্তেজনা এবং আটক পাইলটকে মুক্তির দাবি নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি জরুরি বৈঠকের পর কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অবিলম্বে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক বক্তব্যে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।

দুই দেশের মধ্যে চলমান সংকট নিরসনে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.