ফ্লাইট মিস হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন এই ব্যক্তি।
উদভ্রান্তের মতো ছুটছিলেন এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছতে চাইছিলেন বিমানবন্দরের নির্দিষ্ট টার্মিনালের গেটে। হাতে সময় কম। নার্ভাস হয়ে গিয়ে কোন দিকে যে সঠিক রাস্তা সেটাও ঠাহর করতে পারছিলেন। তাই সাহায্যও চাইছিলেন আশেপাশের লোকদের থেকে।
কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। সঠিক গেটেই পৌঁছলেন বটে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের দু’মিনিট পর। নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আর ঢুকতে দেয়নি। ততক্ষণে উড়ে গিয়েছে বিমান। অগত্যা ফ্লাইট মিস। নিজের ভাগ্যকে দুষে পরের ফ্লাইটের টিকিট কাটতে যাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। ঠিক তখনই জানতে পারলেন তাঁর দু’মিনিট দেরির জন্যই আজ বেঁচে রয়েছেন তিনি। কারণ ততক্ষণে ১৪৯জন যাত্রী সমেত ভেঙে পড়েছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইটি-৩০২। আর এ দিনের বিমানে তিনি ছিলেন ১৫০তম যাত্রী।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের থেকে এ কথা শুনে মুহূর্তের জন্য শিউরে উঠেছিলেন গ্রিসের বাসিন্দা অ্যান্টোনিস মাভরোপোলাস। ভাগ্যিস দু’মিনিট আগে আসেননি। তাহলে এ যাত্রায় আর বেঁচে ফেরা হতো না। খানিকক্ষণ আগেই যে ভাগ্যকে দুষছিলেন, তাকেই পরম সৌভাগ্য বলে মনে হচ্ছিল অ্যান্টনিসের। সেদিনের প্লেনের টিকিটের ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন গ্রিসের ওই যাত্রী। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “আমি ভাগ্যবান। এটা আমার জীবনের লাকি ডে।”
রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩৮মিনিটে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা শহর থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ইটি-৩০২। কিন্তু উড়ানের পরেই এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওই বিমানের। র্যাডারেও আর দেখা যায়নি বিমানটিকে। এরপর ঠিক ৬মিনিটের মাথায় ৮টা ৪৪মিনিট নাগাদ খবর আসে ১৪৯ জন যাত্রী এবং ৮ জন ক্রু মেম্বার সহ মোট ১৫৭ জনকে নিয়ে ভেঙে পড়েছে নাইরোবিগামী ওই বিমান। এই বিমানেই সওয়ার হয়েছিলেন চার ভারতীয়ও। সূত্রের খবর, আদ্দিস আবাবা শহরের ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে বিশোফটু গ্রামের কাছে বিমানটি ভেঙে পড়েছে। অনুমান, বিমানে সওয়ার সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। তবে বরাতজোরে এ দিন ফ্লাইট মিস করায় বেঁচে গিয়েছেন ফ্লাইট ইটি-৩০২-এর ১৫০তম যাত্রী অ্যান্টোনিস।
তবে প্রাথমিক ভাবে অ্যান্টোনিসের ভাগ্যের প্রশংসা করলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সন্দেহের নজর থেকেও রেহাই পাননি গ্রিসের বাসিন্দা। তিনি জানিয়েছেন, “ওরা আমায় বিমানবন্দর থেকে বেরতে দিচ্ছিল না। সত্যিই আমার দেরি হয়েছে, নাকি অন্য কোনও কারণে আমি প্লেনে উঠিনি সে নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদও করে।” তবে প্লেন ক্র্যাশের ক্ষেত্রে প্রথমে অ্যান্টোনিসকে সন্দেহ করলেও জিজ্ঞাসবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, রবিবারের এই উড়ানে ৩০টিরও বেশি দেশের যাত্রী সওয়ার হয়েছিলেন। এ দিন সন্ধ্যায় নাইরোবিতে রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানের বার্ষিক সম্মেলন ছিল। সেখানেই যোগ দিতে এই প্লেনে চড়েছিলেন বহু যাত্রী। এমনকী রাষ্ট্রসংঘের ওই অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে যাচ্ছিলেন গ্রিসের বাসিন্দা অ্যান্টোনিস। তবে মাত্র দু’মিনিট দেরির জন্যই এ যাত্রায় ফ্লাইট মিস করেন তিনি। অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি ঠিকই। কিন্তু প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি।
ঠিক কী কারণে বিমানটি ভেঙে পড়েছে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি ইথিওপিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। যান্ত্রিক ত্রুটি, নাকি অন্য কোনও কারণে ভেঙে পড়েছে এই বিমান তা এখনও জানা যায়নি। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এ দিন বিমান দুর্ঘটনার পরেই ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে টুইট করে শোকপ্রকাশ করা হয়। সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্তও নিয়েছে ইথিওপিয়া সরকার।