মোদির সফরেই তিস্তা চুক্তি, আসছেন মমতাও

Modi_teesta_bg_721152804ঢাকা: আসছে ঢাকা সফরেই তিস্তার পানি বণ্টণ চুক্তি সই করতে চায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল-সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের সকল প্রক্রিয়‍া চূড়ান্ত করার পর মোদী সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারই এই তিস্তা চুক্তির বিষয় চূড়ান্ত করে ফেলা।

তারা আশা করছেন, আগামী জুন-জুলাইয়ের যে কোনও সময়ে মোদীর প্রত্যাশিত ঢাকা সফরের সময়েই সই হবে এই চুক্তি।

চুক্তি স্বাক্ষরের সে আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতি নিশ্চিত করতেও কেন্দ্রীয় সরকার কাজ শুরু করেছে।

ভারতের একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এ খবর জানাচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে সংবাদপত্রটি বলছে, মোদী চাইছেন তার ঢাকা সফরের সমযে এই চুক্তি সই করবেন। আর সেই সফরে তার সঙ্গী হবেন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, মমতা ব্যানার্জি এর আগে ২০১১ সালে শেষ মূহূর্তে বাধ সেধে আটকে দিয়েছিলেন তিস্তা চুক্তি। সেক্ষেত্রে ‍এবার আগে-ভাগেই মমতাকে মত দেওয়ার জন্য বলেছে কেন্দ্র। কেন্দ্র বলছে, তিনি যা কিছু বলতে চান খোলাসা করতে বলতে পারেন। কেন্দ্র অবশ্য এও মনে করছে, তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেত্রী ২০১৬ সালের রাজ্যসভা নির্বাচন সামনে রেখেই রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ওদিকে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন সূত্রের সঙ্গেও কথা বলেছে ভারতের জাতীয় সংবাদপত্রটি। তিনিও বলেছেন, তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার ব্যাপারে একটি ইতিবাচক নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা চলছে। মোদির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে ঢাকা আসছেন সে বিষয়টিও চূড়ান্ত হওয়ার পথে।

বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের এই প্রত্যাশার বিষয়টিতে মমতা সচেতন রয়েছেন এমন মত দিয়ে ঘনিষ্ঠ সূত্রটি আরও বলেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে যখন তিনি ঢাকা সফর করেছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আলোচনার বেশিরভাগটা জুড়েই ছিলো এই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গ।

ওদিকে গত এক দশক ধরে তিস্তা যে এখন অনেকটা শুকিয়ে আসছে সে কথাও উঠে আসছে আলোচনায়। দেশটির ২৭টি সেচ প্রকল্প নির্ভর করে এই নদীর ওপর। এ অবস্থায় নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় সামনে রেখে এর পানি ভাগাভাগি একটি স্পর্শকাতর রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও রয়েছে।

তবে যে চুক্তির কথা এখন বলা হচ্ছে তা দুই দেশের জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

চুক্তির বিরুদ্ধে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে তা অস্বচ্ছ ধারনা থেকে বলেই মনে করছেন উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা।

বলা হচ্ছে, ২০১১ সালে যে চুক্তিটি প্রায় সই হতে যাচ্ছিলো তাতে ভারত ও বাংলাদেশ তিস্তার পানি আধাআধি ভাগ করে নেওয়ায় সম্মত ছিলো।

কিন্তু মমতা ব্যানার্জি চেয়ে বসলেন তাদের ভাগে গোজালডোবায় ৭৫ ভাগ হিস্যা। ১৯৭৬ সাল থেকে এই অংশে একটি বাঁধ তৈরির কাজ নির্মাণাধীন রেখেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এই বাঁধ তৈরি সম্পন্ন হলে ৯ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমি চাষ সম্ভব হবে যার পরিমান এখন ৫৮ হাজার হেক্টর।

ভারতের গোজালডোবায় ভাটির দিকে ২৫ শতাংশ আর নদী বয়ে এসে লালমনিরহাট ডালিয়া বাঁধের কাছে আসলে আরও ২৫ শতাংশ পাওয়া যাবে এমন প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশও রাজি ছিলো।

এ অবস্থায় সেবার চূড়ান্ত প্রায় চুক্তিটি সই হয়নি মমতার শেষ মূহূর্তের পিছটানের কারণে। মমতার ঘনিষ্ঠ সূত্রটি বলছে, সেবার ইউপিএ সরকারের সঙ্গে মমতার রাজনৈতিক দূরত্বের কারণেই ছিলো সেই পিছটান। যা মোদি সরকারের সঙ্গে নেই। ফলে তিস্তা চুক্তি সই এখন সময়ের অপেক্ষাই মাত্র।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.