রবি’র রাজস্ব বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ১ শতাংশ : বিরূপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও নেটওয়ার্কে ২৮ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এক নজরে
× এক বছরে গ্রাহক বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটি ৬৩ লাখে পৌঁছেছে।
× পূর্ববর্তী বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় এ বছর নেটওয়ার্ক বিস্তৃতিতে ২৮ শতাংশ বিনিয়োগ বেড়েছে, যা দাঁড়িয়েছে ৬৪০ কোটি টাকায়
× রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে ৪৬০ কোটি, যা ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের রাজস্বের ৩৮ শতাংশ
ঢাকা, ১৯ মে, ২০১৫: রাজধানীর গুলশানে রবি কর্পোরেট অফিসে আজ, ১৯ মে, ২০১৫ (মঙ্গলবার) ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবসায়িক ফলাফল ঘোষণা করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিরূপ পরিস্থিতিতে শুরু হওয়া এই বছরের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রবি’র গ্রাহক সংখ্যা ১০ লাখ বেড়ে ২ কোটি ৬৩ লাখে পৌঁছেছে। যা দেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যার ২১ দশমিক ৩ শতাংশ।
২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে রাজস্ব গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ২২০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ফলে ইন্টারনেট থেকে রাজস্ব অভাবনীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ১৭০ শতাংশেরও বেশি। নেটওয়ার্কে বড় অংকের বিনিয়োগ এবং ৩.৫জি ও ২.৫জি সেবা ব্যবহারে উৎসাহিত করতে গ্রাহকদের জন্যে বিভিন্ন উদ্ভাবনী অফার ইন্টারনেট থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
ক্রমাগত বিনিয়োগের ফলে নেটওয়ার্ক খাতে উচ্চ ব্যয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে এই বছর অপারেটিং প্রফিট (ইবিআইটিডিএ) মার্জিন দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য কম। ২.৫জি/৩.৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বিনিয়োগ এবং ইবিআইটিডিএ কম হওয়ায় কর পরবর্তী মুনাফা বা পিএটি (প্রফিট আফটার ট্যাক্স) কমেছে।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ: ২০১৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিক ও ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিক
রবি ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকের আস্থা, সেবার মান ও মানসম্মত নেটওয়ার্কের কারণে রবি’র গ্রাহক সংখ্যা ৪ শতাংশ বা ১০ লাখ বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটি ৬৩ লাখে পৌঁছেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তীব্র প্রতিযোগিতার ফলে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে গত প্রান্তিকের তুলনায় এই প্রান্তিকে রাজস্ব ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ১ হাজার ২২০ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট থেকে রাজস্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় পরিকল্পিত বিনিয়োগের ফলে ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইবিআইটিডিএ শূণ্য দশমিক ৭ শতাংশ বা ৪৬০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইবিআইটিডিএ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই প্রান্তিকের পিএটি ১ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৩ কোটিতে পৌঁছেছে।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ: ২০১৪ সালের প্রথম প্রান্তিক ও ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিক
পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর কোম্পানির রাজস্ব ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং গ্রাহক সংখ্যা ২৪ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রবির মোট গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৬৩ লাখ। রবির এ উল্লেখযোগ্য গ্রাহক বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে গ্রাহক-বান্ধব পণ্য ও সেবা প্রদান এবং মানসম্মত নেটওয়ার্কের নিশ্চয়তা।
২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব ৪ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ২২০ কোটিতে পৌঁছেছে। দেশজুড়ে মানসম্মত ৩.৫জি সেবা ছড়িয়ে দেওয়ায় একই সময়ে ইন্টারনেট থেকে রাজস্ব ১৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রান্তিক শেষে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখে পৌঁছেছে।
২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের ইবিআইটিডিএ মার্জিন ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইবিআইটিডিএ ছিল ৪৭০ কোটি টাকা যা ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে কমে ৪৬০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। মূলত নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও বিপণন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ইবিআইটিডিএ কমেছে।
অবচয় বৃদ্ধি এবং নতুন মূলধনী ব্যয় ও থ্রিজি তরঙ্গের অব্যাহত মূল্য পরিশোধের ফলে ২০১৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় পিএটি ১১ শতাংশ কমেছে। ২০১৫ সালের পিএটি’র পরিমাণ ৯৩ কোটি টাকা।
মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামোয় ব্যয়:
৩.৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তার এবং ২.৫জি নেটওয়ার্কে ভয়েস ও ইন্টারনেট সেবা আরো উন্নত করতে বিপুল বিনিয়োগ করে চলেছে রবি। দেশজুড়ে ২ হাজার ৪০০শ’র বেশি ৩.৫জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে রবি। ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে মূলধনী ব্যয়ে ৬৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগসহ এ পর্যন্ত মোট মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৬০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। দেশজুড়ে ৭ হাজার ৫১১টি সাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করছে রবি যার মধ্যে ৩.৫ জি নেটওয়ার্কের সংখ্যা ২ হাজার ৪০০টি’র বেশি।
মন্তব্য:
রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও সুপুন বীরাসিংহে বলেন, “২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে ইন্টারনেট থেকে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব অর্জন করেছি। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসার সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও গ্রাহকদের জন্য মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে ২.৫জি/৩.৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তারে আমরা বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি।”
রবি’র চিফ অপারেটিং অফিসার মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “রবি সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে যার ফলে গ্রাহকরা সহজে ও কম খরচে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে। এছাড়া ১০০টি দেশে রবি সাশ্রয়ী মূল্যে ‘সর্বোৎকৃষ্ট রোমিং’ সেবা প্রদান করছে। আমাদের সেবার প্রতি আস্থা রাখার জন্য গ্রাহকদের মূল্যায়ন করতে আমরা ‘ধন্যবাদ’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছি। এন্টারপ্রাইজ ও এসএমই গ্রাহকদের জন্য রবি বেশ কয়েকটি বিজনেস সলিউশন সেবা চালু করেছে।”
স্টেকহোল্ডারদের পরিশোধিত অর্থের বিবরণ:
২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৪৬০ কোটি টাকার বেশি জমা দিয়েছে যা মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রবি এ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি, অন্যদিকে একই সময়ে স্টেকহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে ২৬০ কোটি টাকা।
রবি সম্পর্কে
রবি আজিয়াটা লিমিটেড হল মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও জাপানের এনটিটি ডকোমো ইনক. এর একটি সম্মিলিত উদ্যোগ। রাজস্বের ভিত্তিতে রবি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর যার গ্রাহক সংখ্যা ২৬ মিলিয়নের বেশি। ১১ হাজার ৭০০শ’র বেশি বিটিএস ও ২ হাজার ৪০০টি’র বেশি ৩.৫জি নেটওয়ার্ক নিয়ে দেশের প্রায় ৯৯% জনসংখ্যা রবি নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত। রবি বাজারের সবচেয়ে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক রোমিং সেবা প্রদান করছে যা ২০০টি দেশে ৬০০টি’র বেশি অপারেটরকে সংযুক্ত করেছে।
রবি দেশের প্রথম অপারেটর হিসেবে জিপিআরএস ও ৩.৫জি সেবা চালু করেছে। অপারেটরটি ডিজিটাল সেবা চালুর দিক থেকে অনেক ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালন এবং গ্রামীণ ও উপশহর অঞ্চলগুলোর সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য মোবাইল আর্থিক সেবা চালু করতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।