জেট কর্মীদের পাশে কোরিয়ান এয়ারওয়েজ

জেট কর্মীদের পাশে কোরিয়ান এয়ারওয়েজ।

দেশে-বিদেশে উড়ান আপাতত বন্ধ। সংস্থার অফিসে তালা। সাময়িক ভাবে নাকি পাকাপাকি ভাবে দেহ রাখল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থা জেট এয়ারওয়েজ, সেটা এখনও অস্পষ্ট। চাকরি খুইয়েছেন প্রায় ২২ হাজার কর্মী। পাইলট-বিমান কর্মীদের মিছিলে, স্লোগানে, হাহাকারে ভারী হয়েছে দেশের বাতাস। জেটের এমন দূরাবস্থায় কর্মীদের চাকরি দিতে আগেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্পাইস জেট। এ বার জেট কর্মীদের সংসার বাঁচাতে আসরে নামলো কোরিয়ান এয়ারওয়েজ।

পাশের থাকার আশ্বাস নিয়ে জেট কর্মীদের বার্তা দিতে শুক্রবার ও শনিবার, দু’দিন রাজধানীতে মিছিল করবেন কোরিয়ান এয়ারওয়েজের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গ দেবে জেটের পাইলট ইউনিয়ন ‘ন্য়াশনাল অ্য়াভিয়েটরস গিল্ড’ (NAG)। কোরিয়ান এয়ারওয়েজের তরফে জানানো হয়েছে, এই মিছিলের উদ্দেশ্য জেট কর্মীদের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। খুব দ্রুতই যোগ্য কর্মীদের চাকরিতে নিয়োগ করা হবে।

সংস্থার সূত্রে খবর, জেটের ৩০০-৪০০ পাইলটকে বি৭৭৭-৩০০এসের উড়ানে নিয়োগ করা হবে। কোরিয়ান এয়ারওয়েজের বোয়িং এবং এয়ারবাস চলাচল করে বিশ্বের প্রায় ১২৪টি শহরে। সংস্থার নিজস্ব ১৬৭টি এয়ারক্রাফ্ট নিত্যদিন পাড়ি দেয় বিশ্বের ৪৪টি দেশে। দেশ-বিদেশের একাধিক উড়ানে শূন্য পদ রয়েছে। সেখানে জেটের কর্মী-পাইলটদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে এয়ারলাইন্স সূত্রে খবর। সংস্থার তরফে ই-মেল পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি কোরিয়ান এয়ারওয়েজের উড়ানের গতিপথ, এয়ারক্রাফ্ট-সহ য়াবতীয় তথ্য পৌঁছে দেওয়া হবে জেটের পাইলটদের কাছে।

জেট বসে যাওয়ার পর থেকে সংস্থা ছেড়ে চলে গিয়েছেন ন্য়াগের বহু পাইলটই। ১৫০০ জন পাইলটের মধ্যে ১০০ জন আগেই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। কালে কালে সংস্থা ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন আরও অনেক দক্ষ পাইলট। স্পাইস জেট, ভিস্তারা, এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগোতে যোগ দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই। ন্যাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন অসীম ভালিয়ানির কথায়, ‘‘কোরিয়ান এয়ারওয়েজের সঙ্গে রোড-শো করবো আমরা। এই সংস্থা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমরা গর্বিত। তবে এখনও আশা রাখছি জেট আবার ঘুরে দাঁড়াবে।‘’

জেটের কাঁধে এই মুহূর্তে ৮,৫০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে কর্মীদের বকেয়া বেতন। ফেরত দিতে হবে বাতিল যাওয়া উড়ানগুলির টিকিটের দামও। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে জ্বালানি সংকট। ফলে অনেকে মনে করছেন, নতুন করে লগ্নিকারীরা পুঁজি না ঢাললে এর পরে জেটের চাকা ফের গড়াবে কি না তা বলা বেশ কঠিন। তবে লগ্নিকারীদের অনেকেই হাত তুলে নেওয়ায় নতুন পুঁজি নিয়েও সংশয় রয়েছে।

ভারতের এখন যে কটি বেসরকারি বিমান সংস্থা রয়েছে, জেট তাদের মধ্যে সব থেকে পুরনো। ১৯৯৩ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে জেট। প্রথম আর্থিক সংকট তৈরি হয় ২০১০ সালে। সে বার পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন নরেশ গয়াল। তবে এ বারের অবস্থা ভিন্ন। জেটের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন গয়াল ও তাঁর স্ত্রী। অভিযোগ, নরেশ গোয়েল সব সিদ্ধান্ত একা নিতেন। আর কারও মতামত গ্রাহ্য করতেন না। তিনি একের পর এক ভুল করে জেট এয়ারওয়েজকে ডুবিয়েছেন। স্পাইস জেট, ইন্ডিগো, গো-এয়ারের মতো কম খরচের উড়ানগুলি যে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, সেদিকে জেট লক্ষ রাখেনি। তারা কর্পোরেট সেক্টরের ওপরেই পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে। এইভাবে ক্রমশ পতন ঘনিয়ে এসেছে জেট এয়ারওয়েজের।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.