হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন করবে বাংলাদেশ সরকার

Hajjএভিয়েশন নিউজ: চলতি বছর বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য মোয়াল্লেম ফি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ মে। ওই দিন পর্যন্ত প্রায় ৯৭ হাজার বাংলাদেশি মোয়াল্লেম ফি জমা দিয়েছেন। তারা হজ পালনের জন্য এবার সৌদি আরব যাবেন। প্রতিবছর একই নিয়মেই হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলে আসছিল। কিন্তু চলতি বছর থেকে এ নিয়মে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চলতি বছর থেকে হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

সূত্রমতে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন বাংলাদেশির হজ পালনের বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হয়। কিন্তু মোয়াল্লেম ফি জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় ৯৭ হাজার বাংলাদেশি ফি জমা দিয়েছেন। প্রতিবছরই মোয়াল্লেম ফি জমা দেওয়ার পরই বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা নির্ধারিত হয়। কিন্তু চলতি বছর থেকে পরবর্তী বছরের হজযাত্রীদের পূর্ববর্তী বছর তালিকাভুক্ত হতে হবে। নতুন নিয়ম বাস্তবায়িত হলে হজচুক্তির পর কোনও অবস্থায়ই বাংলাদেশিরা হজ পালনের সুযোগ পাবেন না।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যান, তাদের চূড়ান্ত তালিকা নির্ধারণের পরই হজচুক্তি সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি সরকারের হজচুক্তি হয় অনুমানের ওপর নির্ভর করে। এখন সৌদি সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ বাংলাদেশি হজ পালন করতে সৌদি আরবে যাবেন, তা চুক্তির সময় জানিয়ে দিতে হবে। সৌদি সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশ থেকে যারা হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন, তারা যেন হজচুক্তির আগেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। হজচুক্তিকালে হজযাত্রীর পরিমাণ উল্লেখ করা যায়।

তারা আরও বলেন, নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নে হজ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি সফটঅয়্যার সংযুক্ত করা হবে। আগ্রহীরা সরকারের একটি নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে (অ্যাকাউন্টে) টাকা জমা দিয়ে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করবেন। সফটঅয়্যারে সরকারি পর্যায় (ব্যালটি) এবং বেসরকারি পর্যায় (নন-ব্যালটি) হজ পালনের জন্য আলাদা অপশন (আবেদন ফরম) থাকবে।

যারা বেসরকারি পর্যায়ে যেতে আগ্রহী, তারা আবেদনপত্র পূরণকালে কোন এজেন্সির মাধ্যমে যেতে চান- তা উল্লেখ করবেন। পরবর্তী সময়ে কোন এজেন্সির অনুকূলে কতজন হজযাত্রী আবেদন করেছেন, তার তালিকা তৈরি করে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজ এজেন্সি প্রাপ্য হজযাত্রীর অনুপাতে হজ এজেন্সির নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, সব দেশে হজযাত্রীর তালিকা হজচুক্তির আগে করা হয়। সেই হিসাবে সৌদি সরকার হজযাত্রীর আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা ও পরিবহন ব্যবস্থার আয়োজন সম্পন্ন করে। কিন্তু আমাদের বেলায় হয়েছে উল্টো। হজচুক্তি করার কয়েক মাস পরে হজযাত্রীর তালিকা পাঠানো হয় সৌদি আরবে। আবার যে পরিমাণ হজযাত্রীর বিষয়ে চুক্তি করা হয়, সেই পরিমাণ হজযাত্রী পাওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে সৌদি সরকারের কাছে বাংলাদেশ সরকারকে লজ্জায় পড়তে হয়।

সৌদি সরকারের নির্দেশনা রয়েছে কী পরিমাণ হজযাত্রী যাবে, তা হজচুক্তিকালে নিশ্চিত করতে। আমরাও চাই অন্য দেশের মতো হজচুক্তির সময়ই আমাদের হজযাত্রীর পরিমাণ জানিয়ে দিতে। এছাড়া নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে গ্রুপ লিডার, হজ কাফেলা, দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।

হজযাত্রীর প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। কারণ হজযাত্রীরা প্যাকেজ মূল্য সরকারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করবেন। দালালরা কমমূল্যে হজযাত্রী সংগ্রহ করতে পারবে না। কোনও এজেন্সি হজযাত্রীকে নিতে অপারগ হলে সরকার হজযাত্রীর জমাকৃত টাকা দিয়েই তাকে হজ করানোর ব্যবস্থা করবে।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল ধর্মবিষয়ক সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।

এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সিনিয়র সভাপতি আব্দুল কবির খান বলেন, প্রতিবছরই সৌদি সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় আপডেট আনে। হজযাত্রীর কল্যাণে আমাদের দেশেও যদি হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়, তাহলে হাব তাতে সম্মতি দেবে। তবে হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে হাবকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

আমাদের সময়ের সৌজন্যে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.