মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মন্ত্রণালয় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাবতীয় সেবা কার্যক্রম। বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন, কার্গো হ্যান্ডেলিং, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, ব্যাগেজ বেল্ট, বে-এরিয়াসহ ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট এ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও একজন যুগ্ম সচিবের মোবাইল ফোনের সঙ্গে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার অনলাইন সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এ ক্যামেরার মাধ্যমে মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কাস্টমসের সেবা কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। ছুটির দিনেও ঘরে বসে সংশ্লিষ্টরা এ মনিটরিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, শাহজালালের বিরুদ্ধে বিমান পরিবহন, কাস্টমস ও কার্গো পরিবহনকেন্দ্রিক প্রতিদিনই বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আসে। এছাড়া অনেক কর্মচারী যাত্রীদের লাগেজ কেটে মালামাল চুরি করছে। কার্গো কমপ্লেক্সের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মালামালও চুরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ কারণে বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের থাকা সিসি ক্যামেরার অনলাইন সংযোগ মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এই অনলাইন সিস্টেম চালু হওয়ার পর বিমানবন্দরের অপরাধ অনেক কমে গেছে। এ প্রক্রিয়ায় কারও অনিয়ম ও ফাঁকিবাজি চোখে পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশন অথরিটির দায়িত্বে থাকা হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৪টি সংস্থা কাজ করছে। সামগ্রিক নিরাপত্তা, চোরাচালান ও অন্যান্য সেবা কার্যক্রম তদারকির জন্য পুরো বিমানবন্দর এলাকায় অন্তত ২২০টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির।
আরও ৭০০ সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে জরুরি ভিত্তিতে সাড়ে ৩০০ সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে মনিটরিং করা হয় এসব সিসি ক্যামেরা। এখন এর সংযোগ মন্ত্রণালয়কেও দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে নিজস্ব সংস্থার কার্যক্রম তদারকি ও নিরাপত্তার জন্য সিভিল এভিয়েশন ছাড়াও ঢাকা কাস্টম হাউস, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিসি ক্যামেরা রয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
বিমানবন্দরের একমাত্র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে আমদানি, রফতানি কার্গো ভিলেজসহ টার্মিনাল ভবনগুলোতেও সিসি ক্যামেরা রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় বিমানবন্দরের সেবা নিয়ে অভিযোগ আসে মন্ত্রণালয়ে। বিমানবন্দরে আমদানি করা পণ্য সরবরাহে দেরি হওয়া, মালামাল চুরি যাওয়া নিয়েও অভিযোগ করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া কার্গো ভিলেজসহ বিমানবন্দরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়েও অভিযোগ পাচ্ছে মন্ত্রণালয়। লাগেজ কেটে যাত্রীদের মালামাল চুরি, বে-এরিয়াতে বসে লাগেজ কাটাছেঁড়া, বেল্টে মালামাল পরিবহনে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ, ট্রাফিক হেলপার ও কার্গো হেলপারদের কাজে ফাঁকি, সিবিএ নেতাকর্মীদের কাজ না করে আড্ডা, বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ডিউটি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এ মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের এক সমন্বয় সভায় ঢাকা কাস্টম এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন, কার্গো ওয়্যারহাউসের ভেতরে বিমানের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন পণ্যের রোলের ওপর থাকা কভার খুলে নিয়ে যাচ্ছেন, এতে মালামাল বৃষ্টিসহ আবহাওয়াজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু গার্মেন্ট পণ্য সময়মতো ডেলিভারি নেয়া হয় না। ফলে ওয়্যারহাউসের জায়গা দখল হয়ে থাকে। বিমানের ৫ জন সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে ৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও সংশ্লিষ্ট এজেন্সি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন সময় বিমানবন্দরের নানা সেবা নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও অভিযোগ আসে। একাধিক মন্ত্রী-এমপির লাগেজ কেটে মালমাল চুরিরও অভিযোগ আছে।
একইসঙ্গে বিমানের কার্গো হ্যান্ডেলিং নিয়েও বিস্তর অভিযোগ আছে তাদের কাছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং মেশিন দিয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কাজ হলেও সেগুলোর ভাড়া বিমানের কোষাগারে জমা হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে যেসব নিয়মিত সমন্বয় সভা হচ্ছে সেখানে এসব অভিযোগ উত্থাপন করলেও কাজ হচ্ছে না।
অন্যদিকে যারা অভিযোগ করেন তাদেরও তথ্যগত ঘাটতি থাকে। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জোরদার ব্যবস্থা নেয়া সব সময় সম্ভব হয় না। এ কারণেই বিমানবন্দরের তিন সংস্থার সিসি ক্যামেরার অনলাইন সংযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি কম্পিউটার ও একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে স্থাপন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও কার্যক্রম তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহজালাল বিমানবন্দর টার্মিনালে কর্মরত আর্মড পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মূল টার্মিনাল ভবনসহ কার্গো ও হ্যাঙ্গার গেটে এখন মাত্র ২২০টি সিসি ক্যামেরা সক্রিয়। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গোপন ক্যামেরা না থাকায় নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগে টার্মিনাল ভবনের চারতলায় বিমানের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুম থেকে পৌনে দুই কেজি সোনা উদ্ধারের ঘটনা তদন্তের জন্য সিসি ক্যামেরা খোঁজা হয়।
কিন্তু তদন্তকারীদের জানানো হয়, রুমটি ছিল সিসি ক্যামেরার আওতার বাইরে। এখনও সেখানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। শুধু তাই নয়, এয়ারপোর্টের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পয়েন্ট রয়েছে যেখানে সিসি ক্যামেরা নেই। এ কারণেই শাহজালাল থেকে চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।