মানবপাচার : হাব নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত

Habb_601100862ঢাকা: হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি ও সংগঠনটির সাত নেতাসহ মানবপাচারে জড়িত ওমরা এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। অভিযুক্ত এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল এবং এজেন্টদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মানবপাচারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে গত ২৮ মে সৌদি আরবের ওমরা বিষয়ক উপমন্ত্রী ইসা বিন মোহাম্মদ রাওয়াসের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান সৌদি। আর, অভিযুক্ত ওমরা এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ এজেন্টদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (হজ) হাসান জাহাঙ্গীর আলম।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হাবের সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহারের মালিকাধীন এজেন্সি মেগাটপ ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হেলালের মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সহ-সভাপতি ফরিদ আহমদ মজুমদারের গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং যুগ্ম-মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন কামালের হাসিম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মানবপাচারকারী হিসেবে অভিযুক্ত তালিকায় রয়েছে হাবের নির্বাহী সদস্য এন এম এইচ খাদেম দুলালের খাদেম এয়ার সার্ভিস, আবু বাকর সিদ্দিকীর আল নূর ইন্টারন্যাশনাল, আবুল মালেকের সবুজ বাংলা ইন্টারন্যাশনাল, হাব চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি মো. ইলিয়াসের গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং হাব সভাপতির জামাতা সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব মান্নানের টাইমস এভিয়েশনও।

সূত্র আরও জানায়, ওমরার জন্য ৬৫টি এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানো লোকের মধ্যে মোট ১০ হাজার ১৩০ জন আর ফেরত আসেনি। ভিসা চালুর তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এতো লোক ফেরত না আসার কারণে আড়াই মাস আগে ওমরার ভিসা বন্ধ করে দেয় সৌদি সরকার। পাশাপাশি এই মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে সৌদি আরবেরও সাতটি এজেন্টের ওমরার ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশি হজ কাউন্সেলর মো. আসাদুজ্জমান মানবপাচারে জড়িত ওমরা এজেন্সির তালিকা পাঠান ধর্ম সচিবের কাছে। গত ২৫ মে পাঠানো ওই চিঠিতে কোন এজেন্সির কতজন লোক সৌদি আরব থেকে ফেরত আসেনি তাও জানিয়ে দেওয়া হয়। ওই চিঠির পর পরবর্তী তথ্য দিয়ে আবার গত ১ জুন চিঠি দেওয়া হয় ধর্ম সচিবের কাছে।

জানা যায়, ২৫ মে দেওয়া চিঠিতে ৫০টি এজেন্সির তালিকাসহ প্রায় চার হাজার লোক দেশে ফেরেনি বলে উল্লেখ করা হয়। পরে দেওয়া চিঠিটিতে আরও ১৫টি এজেন্সির তালিকা পাঠানো হয়।

এরমধ্যে গত ২৮ মে সৌদির আরবের হজ বিষয়ক উপমন্ত্রীর কাছে ধর্ম সচিবের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সৌদি আবর সরকার প্রায় আড়াই মাস আগে ওমরা ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে আমি মর্মাহত। ওমরার নামে মানবপাচার এবং অন্যান্য অনিয়ম করেছে বাংলাদেশের কিছু ওমরা এজেন্টরা। আমরা অবহিত হয়েছি ওমরার নামে প্রায় ৪ হাজার ওমরা হজযাত্রী সৌদি আরবে গিয়ে তারা আর ফেরত আসেনি। আমরা জরুরি ভিত্তিতে ওমরা এজেন্টদের নাম ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। যাতে তাদের ফেরত আনা যায় এবং আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া যায়।

সচিবের ওই চিঠিতে প্রায় ৪ হাজার ফেরত আসেনি উল্লেখ করা হলেও সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, পাচার হওয়া লোকের সংখ্যা ১০ হাজার ১৩০ জন।

এছাড়া, ওই চিঠিতে অভিযুক্ত ওমরা এজেন্টদের নাম এবং ঠিকানাও দ্রুত পাঠানোর অনুরোধ জানান ধর্ম সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান।

তালিকায় নতুন নাম
গত ২৫ মে হজ কাউন্সেলরের পাঠানো চিঠিতে ৫০ এজেন্সির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও ১৫টি এজেন্সির নাম। অর্থাৎ ওই ১৫টি মিলিয়ে মানবপাচারে জড়িত ওমরা এজেন্সির সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৫টিতে।

নতুন অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর মধ্যে রয়েছে এয়ার ট্যুরস ইন্টারন্যাশনাল, আল আরাফা, আল মদিনা, ট্রাভেলস, আল সোহহানি, আটলান্টিক ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, বাংলা ট্রেড টুরিজম, সিটি ওভারসিজ, একরা এয়ার সার্ভিস, ইকো ইন্টারন্যাশনাল, লাকি ওভারসিজ, নাহার ইন্টারন্যাশনাল, রাজন ওভারসিজ, সিরিনি (Serene) ট্যুর, সোহাদা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস ও স্টার হলিডে।

এই তালিকায় আরও নাম যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বেকায়দায় সাধারণ এজেন্ট
অপরাধী এজেন্টগুলোর অপকর্মে আড়াই মাস ওমরা ভিসা বন্ধ থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ওমরা এজেন্টরা। তাদের দাবি, কিছু অসৎ লোকের জন্য সব ওমরা এজেন্ট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

সাধারণ এজেন্টরা মনে করছেন, যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েও যদি ওমরা ভিসা চালু হয়, তাহলে তা-ই করা উচিত সরকারের। অন্যথায় স্থায়ীভাবে ওমরা ভিসা বন্ধ থাকবে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবাই।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.