এভিয়েশন নিউজ: মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ দুটি দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) জনশক্তি রপ্তানি তলানিতে ঠেকেছে। এক দশক আগেও বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের মোট জনশক্তির প্রায় ৬৪ শতাংশ রপ্তানি হতো সৌদিতে। বর্তমানে সেটি কমে ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষায় (২০১৪) এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। শ্রম রপ্তানিতে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের ফলে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি প্রায় ঋণাত্দক (-) ৭ শতাংশে নেমে গেছে।
জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের এই বড় দুটি দেশ বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ-বিদেশ থেকে জনশক্তি নিচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি না নেওয়ার কারণ হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপরাধ প্রবণতাকেও উল্লেখ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অবৈধভাবে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সৌদি আরব ও আমিরাতে জনশক্তি রপ্তানির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল তার ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি রিক্রুট এজেন্সিগুলোর সঙ্গেও সরকারের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। শেষের কারণ দুটির জন্যই মূলত মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানিতে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটি কাটছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শ্রম রপ্তানির তুলনামূলক চিত্র :
২০০৩ সালে সৌদি আরবে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৩১ জন শ্রমিক রপ্তানি হয়। এক দশক পর ২০১৩ সালে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৬৫৪ জন। আমিরাতের ক্ষেত্রেও একই দশা। ২০১৩ সালে মাত্র ১৪ হাজার ২৪১ জন শ্রমিক রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে। অথচ আগের বছর রপ্তানি হয় ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫২ জন শ্রমিক।
জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে এর ফলে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কমে গেছে প্রবাসী আয়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে যে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা সেটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ঋণাত্দক (-) ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট ১৪ হাজার ৪৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আয় হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ২০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অপরাধ প্রবণতার অভিযোগ :
সম্প্রতি আরব আমিরাত থেকে সরকারের কাছে পাঠানো এক নোটে অভিযোগ করা হয়েছে, দেশটিতে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়, তারমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ করে থাকে বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে সেগুলোও খুব স্পর্শকাতর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে সৌদি বা আরব আমিরাতে যেতে একজন ব্যক্তির ৩ থেকে চার লাখ টাকা, কখনো তার চেয়েও বেশি খরচ হয়। প্রবাসীদের অপরাধ প্রবণতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অপরাধ প্রবণতা ভারত, পাকিস্তানি প্রবাসীদের মধ্যেও রয়েছে। তবে সেসব দেশ কূটনৈতিকভাবে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য সরকার যেমন চীন ও জাপানের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, ঠিক জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতি। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের যে অ্যাম্বাসিগুলো রয়েছে তারা রুটিন কাজের বাইরে আর কিছু করতে চায় না। তাদের অর্থনৈতিক কূটনীতিতে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বেসরকারি রিক্রুট এজেন্সিগুলোর সঙ্গেও সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যদিও বেসরকারি রিক্রুটরা বেশি টাকা নেয়, এক্ষেত্রে সরকারের উচিত তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে জনশক্তি রপ্তানিতে সহযোগিতা দেওয়া। এসব উদ্যোগ না হলে মধ্যপ্রাচ্য সংকট সহজে কাটবে না বলে মন্তব্য করেন সাবেক গভর্নর।
– রুকনুজ্জামান অঞ্জন