প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট থেকে ভিভিআইপি কন্টেইনার গায়েব!

Palki_Prime Minister_Bimanএভিয়েশন নিউজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট থেকে তার নিরাপত্তার কাজে ব্যবহত একটি ভিভিআিইপি কন্টেইনার গায়েব হয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুজি করে ১দিন পর সেটি পাওয়া গেছে থাইল্যান্ডের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কার্গো টার্মিনালে। তবে কন্টোইনার থেকে কোন কিছু খোঁয়া গেছে কিনা জানা যায়নি।

এই ঘটনায় দেশে বিদেশে তোলপাড় উঠলেও বহাল তবিয়তে আছেন থাইল্যান্ডে কর্মরত বিমানের স্টেশন ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব পালনকারী কর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন পরিচালক (কাস্টমার সার্ভিস) জর্জ, জেনারেল ম্যানেজার  (কাস্টমার সার্ভিস) নূরুল ইসলাম হাওলাদারসহ প্রশাসন বিভাগের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ঘনিষ্ট ভাজন হওয়ায় এত বড় ঘটনার পরও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা  ব্যস্ত বিমানের কেবিন ক্রু নিয়োগের আখেরী ধান্ধায়। একই সঙ্গে স্টেশন ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টদের দেখাশোনাকারী কর্মকর্তা মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল হাসানকে প্রমোশন দিয়ে বিমানের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিভাগের (কাস্টমার সার্ভিস) পরিচালক বানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আব্দুল্লাহ আল হাসান কাস্টমার সার্ভিসের পরিচালক হওয়ায় এখন পুরো বিষয়টায় ধামাচাপা পরে যাবে। ইতোমধ্যে কাস্টমার সার্ভিস থেকে এ বিষয়ে তদন্তকারী সেলের সাথে বনিবনা সংক্রান্ত আলামত পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, প্রশাসন ও মার্কেটিং বিভাগকে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে বিমানের বৈদেশিক স্টেশনগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়োগ নেন। একারণে এসব কর্মীরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলে। কাউকে পরোয়া করে না। তবে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলছেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে থাকা ওই কন্টেইনারটিতে উড়োজাহাজের সেফটি সংক্রান্ত গুরুত্বপুর্ণ স্পেয়ার্স পার্টস রক্ষিত ছিল।

এটি কিভাবে গায়েব হয়ে গেছে তা রহস্যজনক। একারণে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বিষয়টি। ঘটনা তদন্তে বিমানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এমনিতে ব্যাপক দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও স্বেচ্চাচারিতার অভিযোগ রয়েছে বিমানের বিরুদ্ধে। তার উপর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভিভিআইপি ফ্লাইট নিয়েও কর্মীদের তামাশা রহস্যজনক। এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।

এর আগেও ঢাকা-ফ্রাঙ্কফ্রুটের একটি ফ্লাইট নিয়েও বাংলাদেশ বিমান আন্তজাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। অনুমতি না থাকার পরও বিমান রাশিয়ার উপর দিয়ে ফ্লাইট চালাতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হয়। ওই ঘটনায় ১৫ কোটি টাকার বেশি গচ্চা দিতে হয়েছিল বিমানকে। কিন্তু তারপরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কারো বিরুদ্ধে। উল্টো দুনীতিবাজদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে তাদের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ পাঠানো হচ্ছে সংবাদ পত্রে।

সম্প্রতি বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজে চড়ে প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যান। নিয়ম অনুযায়ী এধরনের বিশেষ ও ভিভিআইপি ফ্লাইটে একটি বিশেষ কনটেইনার রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাই মুলত ওই কন্টেইনারটি উড়োজাহাজে রাখেন।

এর মধ্যে ইঞ্জিন ও ল্যান্ডিং গিয়ারের পার্টসসহ একটি উড়োজাহাজের সব ধরনের গুরুত্বপুর্ণ স্পেয়ার পার্টস সংরক্ষিত থাকে। প্রয়োজনের সময় যাতে যে কোন পার্টস লাগিয়ে উড়োজাহাজ সচল করা সম্ভব হয় সেজন্য এই কনটেইনারটি নেয়া হয়। নিয়েম অনুযায়ী সর্বোচ্চ নির্দেশনা ছাড়া ওই কনটেইনারে কারো হাত দেয়াও নিষেধ রয়েছে।

এমনকি উর্ধতন কতৃপক্ষের অর্ডার ছাড়া ফ্লাইট থেকে কনটেইনারটি অপসারণ করার বিষয়েও কড়া নির্দেশনা রযেছে। এছাড়া কনটেইনারের গায়েও লেখা থাকে ‘ডু নট রিমুভ ইট’ ‘ডোন্ট চাট ইট’। এছাড়া ফ্লাইট ছাড়ার পরপরই সবগুলো স্টেশনে বিশেষ বার্তার মাধ্যমে ভিভিআিইপি কন্টেইনারটির বিষয়ে নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়।

কিন্তু সব ধরনের নির্দেশনা উপক্ষো করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকরা ফ্লাইট থেকে ওই কনটেইনারটি গায়েব হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির কনটেইনারটি থাইল্যান্ডের বিমান বন্দরে পাওয়া যায়। জানা গেছে, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজের ওই ফ্লাইটটি ঢাকা-চায়না-ব্যাংকক হয়ে ঢাকায় ফিরে আসার কথা ছিল।

জানাগেছে, ফ্লাইটটি চীনের কুনমিং বিমান বন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে নামিয়ে যাত্রী নিয়ে থাইল্যান্ড চলে যায়। এরপর থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসে। ওই ফ্লাইটে থাইল্যান্ডে কর্মরত স্টেশন ম্যানেজারও দেশে আসেন। ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তজাতিক বিমান বন্দরে অবতরণের পর ভিভিআইপি কন্টেইনারটি নামাতে গিয়ে দেখা যায় সেটি নেই।

পুরো একদিন চীনের কুনমিন ও থাইল্যান্ডের সুবৃণভুমি আন্তজাতিক বিমান বন্দরে খোঁজাখুজি করেও কন্টেনাইরটির কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ২৪ ঘন্টা পর থাইল্যান্ডে কর্মরত বিমানের কান্ট্রি মানেজার জানান, থাইল্যান্ড বিমান বন্দরের কার্গো টার্মিনালে কন্টেইনারটি পাওয়া গেছে।

এরপর বিপুল অংকের টাকা গচ্চা দিয়ে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে কন্টেইনারটি বাংলাদেশে আনা হয়। জানাগেছে ওই কন্টেইনারে একটি উড়োজাহাজের প্রায় সব ধরনের গুরুত্বপুর্ণ স্পেয়ার পার্টস থাকে। একটি কন্টেইনারেই দামই কয়েকশ কোটি টাকার বেশি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.