জ্বালানির বকেয়া পরিশোধে অক্ষম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স!

জ্বালানির বকেয়া পরিশোধে অক্ষম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স!

রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনায় জেট ফুয়েল কিনে আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল থেকে। নিয়মিত পাওনা পরিশোধ না করায় বকেয়া পাওনা বাড়তে থাকে পদ্মা অয়েলের কাছে। এতে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশের কাছে পদ্মা অয়েলের পাওনা দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৩ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে বিমান সংস্থাটি লাভে থাকলেও মূলধন ও দায়দেনার সংকট থাকায় বিমান এ বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রমতে, দেশে জেট ফুয়েল বিপণনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা বাংলাদেশ এয়ারলাইসন জেট ফুয়েলের বড় গ্রাহক। সংস্থাটি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য পদ্মা অয়েল থেকে জেট ফুয়েল ক্রয় করে। প্রতিষ্ঠানটির আগস্ট মাস শেষে সুদাসলসহ মোট বকেয়া দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৩ কোটি টাকা।

জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় বকেয়া টাকা বাড়তে থাকে, যদিও ২০১৮ সাল থেকে পদ্মা অয়েল বিমানের কাছে নগদে জ্বালানি তেল বিক্রি করছে। বকেয়া পাওনা পরিশোধে বিমানকে বারবার তাগাদা দিয়ে সাড়া পাচ্ছে না বিপিসি। আর পাওনা পরিশোধের জন্য জ্বালানি বিভাগ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালি ও মিটিং হয়। বিমান পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ঋণের কিস্তি পরিশোধের কথা বলেও গড়িমসি করছে।

বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের বিমান থেকে আয় হয় পাঁচ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। বিপরীতে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এতে লাভ হয়েছে ২৪৮ কোটি টাকা। আর গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় ছিল চার হাজার ৯৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় হয়েছিল পাঁচ হাজার ১৩৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এতে লোকসান হয়েছে ২০১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে ৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা লাভ হয়। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লাভ হয়েছে ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছর (২০১৪-১৫) লাভ হয়েছে ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এবং বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দুই বছর বিমান লাভ করলেও ২০০৯ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি আবার লোকসানে পড়ে। গত ৯টি অর্থবছরের মধ্যে ছয় বছরই লোকসান দিয়েছে। টাকার অঙ্কে সেটা এক হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। বাকি তিন বছরে লাভ করেছে ৫৫৯ কোটি টাকা। মোট লাভ-লোকসান যোগ-বিয়োগ করলে ৯ বছরে মোট লোকসান দাঁড়ায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। এর বাইরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে দেনা রয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠান এখন মূলধন সংকটে পড়েছে। মূলধনের চেয়ে ঋণ কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় হারিয়েছে ঋণ যোগ্যতাও।

এ বিষয়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুল আলম বলেন, বাংলাদেশ বিমানের কাছে গত আগস্ট পর্যন্ত সুদাসলে পাওনা দুই হাজার ৬৩ কোটি টাকা, যা আদায়ের জন্য বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে মিটিং হয়েছে। কিন্তু বিমান বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি। আর পাওনা পরিশোধে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, আপনার তথ্যটা সঠিক নয়। আপনি আগে সঠিক তথ্য নেন! তখন আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করব। বাংলাদেশের সব এয়ারলাইন কোম্পানি একমাত্র পদ্মা অয়েল থেকে জেট ফুয়েল কেনে। আমরা বর্তমানে নগদে এ জ্বালানি কিনি। কিন্তু বকেয়া পাওনা পরিশোধে আপনাদের উদ্যোগ কিংবা পরিকল্পনা আছে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

একই বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক এটিএম সেলিম বলেন, পদ্মা অয়েলের দেওয়া পাওনার তথ্যটি সঠিক। আমাদের কাছেও এটি আছে। বিমান বাংলাদেশ বর্তমানে লাভে আছে। লাভ থেকে আস্তে আস্তে কিছু বকেয়া দেনা পরিশোধ করতে পারে। যদিও পাওনা আদায়ে সর্বশেষ জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠক হয়েছে, পরে সিদ্ধান্ত অনুসারে পাওনা আদায়ে মন্ত্রণালয় তাগাদা দিয়ে চিঠি দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বরাবর। শুনেছি, বিমান আয় থেকে ঋণের সুদ পরিশোধে বেশি মনোযোগী। তবে তাদের মূলধন থেকে দায়দেনার পরিমাণ বেশি হওয়ায় সংকট কাটাতে সময় লাগবে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সব বিমান সংস্থার কাছে জেট ফুয়েল বিক্রির পরিমাণ ছিল চার লাখ আট হাজার ২৭২ মেট্রিক টন, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমান কেনে দেশের মোট বিক্রি করা জেট ফুয়েলের ২৫ শতাংশ। আর ৭৫ শতাংশ কেনে দেশি-বিদেশি প্রাইভেট উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো। তবে তাদের কাছে বিপিসির কোনো বকেয়াও নেই।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.