পবিত্র ওমরাহ পালনের নামে মানবপাচারের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিলসহ শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সিসমূহের রিভিউ পর্যালোচনা সম্পন্ন করেছে সরকার। রিভিউতে ১৯টি এজেন্সির শাস্তি কমানো হয়েছে এবং একটি এজেন্সিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু হজ্ব এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) নেতাদের এজেন্সিগুলো শাস্তি থেকে রেহাই পায়নি। হাব সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি, সহ-সভাপতি, মহাসচিব, যুগ্ন মহাসচিবের এজেন্সিসহ অধিকাংশ শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সির লাইসেন্ত বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্তসহ জরিমানা বহাল রয়েছে। তবে পরবর্তীতে আরো কিছু এজেন্সির শাস্তি কমানো হতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার ধর্মমন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো: শহীদুল্লাহ তালুকদার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে শাস্তিপ্রাপ্ত ১৯টি এজেন্সির শাস্তি কমিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। আর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে অরবিটালস ট্রাভেল এজেন্সিকে। আর বহাল রয়েছে শাস্তিপ্রাপ্ত অন্যান্য এজেন্সির শাস্তি। বর্তমান চলতি হজ্বের নেতৃত্বদানকারী হাব নেতাদের ওমরাহ এজেন্সি বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও বিভিন্ন প্রকার জরিমানা বহাল রয়েছে। ফলে তারা হজ্বের কাজ করতে পারলেও ওমরাহর কাজ করতে পারবেন না। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহারের মেগাটপ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিনের মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড, ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমেদ মজুমদারের গোল্ডেন বেঙ্গল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সনজরী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন কামালের হাশেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান ইসি মেম্বার আফতাব উদ্দীন চৌধুরীর মালিকাধীন আফতাব ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, আটাবের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ মাহবুবের সুরেশ্বর ট্রাভেলস, আটাব চট্টগ্রাম জোনের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের মালিকানাধীন গালফ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস।
বিগত ১৮ নবেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ওমরাহর নামে মানবপাচারের অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলোর তালিকা প্রকাশ করেন। সেদিন তিনি জানান, ১০৪টি ওমরাহ এজেন্সির পাঠানো যাত্রীদের মধ্যে ১১ হাজার ৪৮৫ জন ফেরত আসেনি। এসব এজেন্সির অভিযোগ তদন্ত করে ৯৫টি এজেন্সিকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আর ৯টি এজেন্সির অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেইসাথে শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
শাস্তিপ্রাপ্ত ওমরাহ এজেন্সিগুলোর মধ্যে দু’ কোটি টাকা জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে জিমিনী ট্রাভেলস লি. (লাইসেন্স নং-৭৫), সবুজ বাংলা ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স-৩৩৩), মারুফ ট্রাভেলস (লাইসেন্স-২১৬)। লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্তসহ দেড় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে গোল্ডেন বেঙ্গল ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (লাইসেন্স-২৭৩), অ্যালাইট ট্রাভেলস (লাইসেন্স-২৬২), রব্বানী ওভারসীজ সার্ভিস (লাইসেন্স-২৫১), কনকর্ড ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স-১০), পারাবত ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস লি. (লাইসেন্স-২৬৩)। এক কোটি টাকা জরিমানা ও জামানত বাজেয়াপ্তসহ লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এম এম আর এভিয়েশন (লাইসেন্স-৩১৩), রওশন ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স-৫৪), ইউনাইটেড স্টারস ট্রাভেলস (লাইসেন্স-২৩৩), আফতাব ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (লাইসেন্স-২০২), থ্রি স্টার ট্রাভেলস (লাইসেন্স-২৬৭)।
আর রিভিউর পর গত ১৫ মার্চ ১৯টি এজেন্সির শাস্তি কমানো এজেন্সিগুলো হলো, এয়ার ট্রিপ ইন্টারন্যাশনাল, আল মানসুর এয়ার সার্ভিস, চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, কক্সবাজার ওভারসীজ, ডাইনেস্টি ট্রাভেলস লি., লাব্বাইক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, ইমা ওভারসীজ ট্যুরস, ভার্সেটাইল ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, মক্কা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, বলাকা ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, কম্বাইন্ড ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, নাহার ইন্টারন্যাশনাল, ইহসান এয়ার ট্রাভেলস, আলফা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, মৌরী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাইমন ওভারসীজ এক্সপ্রেস, লিনটাস ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, হাসনাইন ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, ইনামন এভিয়েশন লিমিটেড। এসব এজেন্সীকে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অংকের জমিরানা করা হয়েছে। তবে তারা ওমরাহ কার্যক্রম চালাতে পারবেন।
এদিকে তিন দফায় ১৫৯টি ওমরাহ এজেন্সিকে কাজ করার অনুমতি দিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়। এর বাইরে অন্য কোন এজেন্সি কাজ করতে পারবে না। গত ২১ ডিসেম্বর ১ম দফায় ৭০টি, ২৮ জানুয়ারি ২য় দফায় ৪৭টি এবং ১৫ মার্চ ৩য় দফায় ৪২টি এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়।
আরও খবর