মালয়েশিয়ায় পুনরায় শ্রমবাজার খুলতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা। মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশি হাইকমিশনারের নেতৃত্বে দেশটির মানবসম্পদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন কূটনীতিকরা। বৈঠকে তারা মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশি শ্রমিক নেয়ার ক্ষেত্রে স্থগিতের ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি।
তবে চুক্তির বিষয়ে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী রিচার্ড রিয়ট বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে তার মেয়াদ ৫ বছর। বিদেশে শ্রমিক নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হলেই বাংলাদেশের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে তা কার্যকর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে শ্রমিক আনার ব্যাপারে আমরা কেবল বাংলাদেশের সঙ্গেই চুক্তি করিনি আরো সাতটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। সাময়িক স্থগিত মানেই চুক্তি বাতিল নয় বলেও জানান তিনি।
এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভা নতুন করে বিদেশি শ্রমিক আমদানির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
যে শ্রমিকদের ওয়ার্ক পারমিট নেই বা যাদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ তাদের আবেদন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন তিনি, বিদেশি শ্রমিকরা ৩০ জুন পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন।
এদিকে মালয়েশিয়ার পূর্ত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন করে বিদেশি শ্রমিক না আনার সিদ্ধান্তে চলমান নির্মাণ কাজের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
এ বিষয়ে পূর্তমন্ত্রী ফাদিল্লাহ ইউসুফ বলেন, বর্তমান মালয়েশিয়ায় যে বিদেশি শ্রমিক রয়েছে চাহিদার তুলনায় তা যথেষ্ট। বিদেশি শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করা সাময়িক সমাধান। মিল কারখানাগুলোকে বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করার কথাও বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে ‘জি টু জি’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। সে অনুযায়ী শুধু সরকারিভাবে মালয়েশিয়ার ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে শ্রমিক পাঠানো হয়েছিল।
‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানরূপ সাড়া মেলেনি। পরে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় এলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।