মালয়েশিয়ায় নজরদারিতে সেকেন্ড হোমধারীরা

Tour-Malayasia20160402103227মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম নিয়েছেন এমন বাংলাদেশিদের উপর নজরদারি করছে সরকার। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেকেন্ড হোমধারীদের অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মালয়েশিয়াতে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)।

গত বছরের শেষের দিকে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের যুগ্ম পরিচালক সাব্বির আহমেদকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটির কার্য পরিধি সংক্রান্ত এনবিআরের আদেশে, আয়কর না দিয়ে অবৈধভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বিদেশে পাচার বা সেকেন্ড হোম নির্মাণকারীদের তালিকা প্রস্তুত ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ টিম সেকেন্ড হোম নেয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। সরকারের এ দুই সংস্থার বাইরে ইমিগ্রেশন বিভাগের মাধ্যমে ১০ বছর মেয়াদি মালয়েশিয়ান ভিসাধারী রয়েছেন এমন তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই তালিকা তৈরির পরই পুরোদমে কাজ শুরু করবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।

মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আবেদন করেছেন ২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৬ জন, মার্চে ৩৫ জন, এপ্রিলে ২০ জন, মে মাসে ২৯ জন, জুনে ৯ জন, জুলাইয়ে ৯ জন, আগস্টে ৯ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৫ জন, অক্টোবরে ১৪ জন, নভেম্বরে ২১ জন ও ডিসেম্বরে ৪১ জন।

সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়। শীর্ষে চীন, দ্বিতীয় জাপান। এরপর কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের অবস্থান।

তালিকা সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রজেক্ট প্রথম চালু হয় ২০০২ সালে। প্রথবার কোন বাংলাদেশি সেকেন্ড হোমের জন্য আবেদন করেননি। ২০০৩ সালে প্রথমবার বাংলাদেশিরা আবেদন করেন। তখন থেকে এ পর্যন্ত মোট আবেদন করেছেন প্রায় ৩ হাজার ২৭৫ জন।

এর মধ্যে ২০১৫ সালে ২৭০,২০১৪ সালে ২৫০, ২০১৩ সালে ২৮৫, ২০১১ সালে ২৭৬, ২০১০ সালে ৭৪, ২০০৯ সালে ৮৬, ২০০৮ সালে ৬৮, ২০০৭ সালে ১৪৯, ২০০৬ সালে ৩৪১, ২০০৫ সালে ৮৫২, ২০০৪ সালে ২০৪ ও ২০০৩ সালে ৩২ জন আবেদন করেন।

দুদক ও এনবিআর এর তদন্তে দেখা গেছে, এ সুবিধা পেতে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে মোটা অংকের অর্থ জমা রাখা সত্ত্বেও এ সুযোগ গ্রহণকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে নানাবিদ সমস্যার মুখে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কায় অনেকে সেকেন্ড হোম নিয়ে থাকেন। এ কারণে সরকার পরিবর্তনের সময়গুলোয় সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামে আবেদনের হিড়িক পড়ে যায়।

সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাত বছরে মোট আবেদন পড়েছে ১ হাজার ৩৭০টি। ওয়ান-ইলেভেনে দুই বছরে আবেদন করেছিলেন ২১৭ জন। এর আগে বিএনপি-জামায়াতের চার বছরে আবেদন জমা পড়ে ১ হাজার ৪২৯টি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত এমএমটুএইচ প্রোগ্রামে মালয়েশিয়ার ২৩৮টি এজেন্টের বাইরে অনুমোদিত এজেন্ট নেই। কিন্তু দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় এমএমটুএইচের বাংলাদেশে সাব-এজেন্টের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এখন বিভিন্ন অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ডওয়াইড মাইগ্রেশন কনসালটেন্ট লিমিটেড নামে এক সাব-এজেন্টের ওয়েব সাইটে দেখা গেছে, বিশ্বের তৃতীয় সাশ্রয়ী অবসরকালীন অভিবাসন সুবিধা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম। ১০ বছরের নন-মালয়েশিয়ান ভিসার জন্য আবেদন করতে বাংলাদেশি ৫০ বছরের অনূর্ধ্বদের অ্যাকাউন্টে জমা থাকতে হয় ৫ লাখ রিঙ্গিত বা ১ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং মালয়েশিয়ার ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করতে হয় ৬৫ লাখ টাকা।

পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সীদের জন্য অ্যাকাউন্টে থাকতে হবে সাড়ে ৩ লাখ রিঙ্গিত বা ৭৫ লাখ টাকা। মালয়েশিয়ায় ফিক্সড ডিপোজিট করতে হবে ৩২ লাখ টাকা। তবে উভয় ক্ষেত্রে মাসিক আয় হতে হবে কমপক্ষে ২ লাখ ১২ হাজার টাকা।

মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যে জানা গেছে, যে কোন দেশের নাগরিক মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজেন্সি মারফত বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি এ প্রোগ্রামের সুবিধার জন্য আবেদন করা যাবে।

এছাড়া এজেন্টের মাধ্যমেও সেকেন্ড হোমের জন্য আবেদন করা যাবে। এ প্রোগ্রামে অনেকে আবার প্রতারণার শিকারও হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ৩৩টি দেশের যৌথ কর পরিহার চুক্তি রয়েছে। এসব দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বা বাড়ি নির্মাণে যে কোন এক দেশে কর দিলেই হয়। এ সুযোগ নিয়ে অনেকেই কোন দেশেই কর দেন না। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.