কোটার বাইরে অতিরিক্ত হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন করার ঘোষণা দেয়া হলেও কারিগরি প্রস্তুতি না থাকাসহ বিভিন্ন জটিলতায় রোববার তা শুরু হয়নি। কবে নাগাদ এটি শুরু হবে, তা-ও স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে প্রস্তুতির কাজ শেষ হলে এজেন্সিগুলোকে প্রাক-নিবন্ধন ফের শুরুর সময় আগাম নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে বলে হজ অফিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাক-নিবন্ধন করার জন্য আগ্রহী হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকরা রোববার দিনভর অপেক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত তা শুরু না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্ধারিত সময়ে রোববার প্রাক-নিবন্ধন শুরু না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হজ অফিসের আইটি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুল হক বিশ্বাস জানান, নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন
শুরু করতে সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের কাজ করতে হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পরই এ কাজ শুরু হবে। এতে দুই-একদিন সময় লাগবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অবশ্য সন্ধ্যায় হজ অফিসের এক নোটিশে জানানো হয়, প্রাক-নিবন্ধন ফের চালুর জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেছে এবং কারিগরি প্রস্তুতির কাজ চলছে। প্রস্তুতির কাজ শেষ হলে এজেন্সিগুলোকে প্রাক-নিবন্ধন ফের শুরুর সময় অগ্রিম নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন করে নিবন্ধিতরা পরবর্তী বছরের জন্য তালিকাভুক্ত হবেন। তবে কোনো কারণে কোটা খালি হলে তা অতিরিক্ত তালিকা থেকে ক্রমান্বয়ে সুযোগ পাবেন।
ই-হজ সিস্টেমের আওতায় প্রথম বারের মতো এবার হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ২৩ মার্চ। ৩০ মে পর্যন্ত কোটা থাকা সাপেক্ষে ব্যাংকে মুয়াল্লিম ফি জমা, জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইসহ অনলাইনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অফিস। কিন্তু মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় বেসরকারি হজযাত্রী কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় ২৮ মার্চ দুপুরে হঠাৎ প্রাক-নিবন্ধনের সার্ভার বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে অধিকাংশ হজ এজেন্সি তার মোট হজযাত্রীর আংশিক প্রাক-নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ পায়। এতে প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করা নিয়ে বঞ্চিত হজযাত্রী ও এজেন্সি কর্তৃপক্ষ চরম বিপাকে পড়ে। অনেকে ডাটা এন্ট্রি করে ব্যাংকের ভাউচার পেলেও সার্ভার বন্ধ করে দেয়ায় আর টাকা জমা দিতে পারেননি। কোটার চেয়ে ৪০ হাজারের বেশি হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে ৩১ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মোঃ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাব নেতারা ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে সিদ্ধান্ত হয়, ৩ এপ্রিল থেকে শর্তসাপেক্ষে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন ফের চালু হবে। সিদ্ধান্তের বিষয়টি ওইদিনই হাবের পক্ষ থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে সব হজ এজেন্সিকে জানানো হয়।
এদিকে নতুন করে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধের বিষয়ে ৩১ মার্চের বৈঠকে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও শর্ত রোববার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়। এতে চার দফা শর্তে বলা হয়, ৩ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বেসরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধিতদের তালিকা কোনোক্রমেই ২০১৬ সালের হজে গমনের কোনো নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। হাব এ মর্মে ঘোষণা দেবে এবং ঘোষণাপত্র দাখিল করবে ৩ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বেসরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধিতদের এ বছর হজ প্যাকেজের সুযোগ প্রদানের জন্য কোনো এজেন্সি বা ব্যক্তি কোনো ধরনের দাবি পূরণে চাপ প্রয়োগ করবে না। ২৮ মার্চ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধিত কোনো হজ গমনেচ্ছু জাতীয় হজ ও ওমরা নীতি অনুযায়ী বাদ পড়লে বা গমন করতে না পারলে ৩ এপ্রিল থেকে বেসরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধিতদের মধ্য থেকে ক্রমানুসারে পূরণ করা হবে। অবশিষ্টরা পরবর্তী বছর হজের জন্য প্রাক-নিবন্ধিত বলে গণ্য হবেন। বাদপড়া বেসরকারি হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে ৩ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বেসরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধিতদের তালিকা থেকে কোনোভাবেই এজেন্সিভিত্তিক পূরণের দাবি উত্থাপন করা যাবে না।
সৌদি সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার সহ মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার জনের মধ্যে গাইড ও রাষ্ট্রীয় খরচে হজযাত্রী (৫০০ জনের জন্য সংরক্ষিত) ছাড়া সাধারণ হজযাত্রী ৯ হাজার ৫০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ৭৫৮ জনের মধ্যে গাইড ও মুনাজ্জিম (৩ হাজার ৫৫৮ জন সংরক্ষিত) ছাড়া সাধারণ হজযাত্রী ৮৮ হাজার ২০০ জন হবেন।
আরও খবর