আবেদন অনিষ্পন্ন রেখেই সেবা বন্ধ আইআরআইএসের

imagesবিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশী প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া তার মধ্যে অন্যতম। এ দেশগুলোয় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে মালয়েশীয় কোম্পানি আইআরআইএসকে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু পাসপোর্টের জন্য বাংলাদেশী নাগরিকদের জমা পড়া আবেদন অনিষ্পন্ন রেখেই সেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে এমআরপি নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে প্রবাসীদের।

সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমআরপি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। সে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি সরকারের সঙ্গে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের চুক্তি শেষ হয়েছে। এর পর পরই প্রতিষ্ঠানটি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের এমআরপি দেয়ার অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং সেন্টার এবং অ্যাপ্লিকেশন রিসিভিং সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়। এ কারণে আবেদন করেও পাসপোর্ট পাননি এসব দেশে থাকা বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেকে। ফলে এমআরপি নিয়ে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার মধ্যে আছেন এসব প্রবাসী। তারা বর্তমানে পাসপোর্টের জন্য দূতাবাস এবং কনস্যুলেট কার্যালয়গুলোয় ধরনা দিচ্ছেন।

সংসদীয় কমিটি এ অবস্থায় দেশ তিনটির প্রবাসীদের দ্রুত এমআরপি সরবরাহের জন্য পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে সুপারিশ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি এ বিষয়ে বলেন, চুক্তি মোতাবেক এমআরপি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে শ্রমঘন দেশগুলোর দূতাবাসের মাধ্যমে অবশিষ্ট এমআরপি প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এমআরপি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা। সৌদি আরবে ১২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীকে এমআরপি দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও সেখানে ইস্যু হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ থেকে সাত লাখ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আট লাখ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এমআরপি দেয়া হয়েছে প্রায় সাত লাখ। আর মালয়েশিয়ায় পাঁচ লাখ এমআরপি প্রদানের লক্ষ্য ধরা হলেও এখন পর্যন্ত আড়াই লাখের কাছাকাছি দেয়া সম্ভব হয়েছে। এছাড়া বিশ্বের অন্য দেশগুলোয় ১০ লাখ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এমআরপি দেয়া হয়েছে প্রায় সাত লাখ।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৪ মার্চ পর্যন্ত দূতাবাসগুলো ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ২৯২টি এমআরপি ইস্যু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান আইআরআইএস ইস্যু করেছে ২ লাখ ৪০ হাজার ১৮৬টি এমআরপি। এছাড়া মিশনগুলোয় আরো ৫০ হাজারের বেশি পাসপোর্ট বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে মুদ্রণের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রবাসে থাকা বাংলাদেশীদের হাতে এমআরপি পৌঁছে দেয়ার সময় শেষ হয়েছে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর। যদিও নির্ধারিত এ সময়ে প্রবাসে থাকা সব বাংলাদেশীর হাতে পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে পারেনি পাসপোর্ট অধিদপ্তর। শুরুতে ৩৫ লাখ প্রবাসীর হাতে এমআরপি পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও গত নভেম্বরে তা কমিয়ে ২৬ লাখ ৬৫ হাজার নির্ধারণ করে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানকেই মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ায় অনিষ্পন্ন পাসপোর্টগুলোর কাজ সম্পন্ন করে দিতে হবে। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি।

তিনি আরো জানান, এমআরপি প্রদান কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘আফ্রিকা, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমআরপি প্রদান ত্বরান্বিতকরণ’ এবং ‘ইউরোপ ও আমেরিকায় এমআরপি প্রদান ত্বরান্বিতকরণ’ শীর্ষক দুটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এজন্য প্রায় ১৪২ জন জনবলও অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর চলতি মাস থেকে চীনের কুনমিংয়ের মিশনে এমআরপি কার্যক্রম শুরু হবে।

জানা গেছে, বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঠিক কোনো হিসাব নেই সরকারের কাছে। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা ৯৬ লাখ। এর বাইরেও অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে প্রবাসে থাকা এ বিশাল সংখ্যক বাংলাদেশীর মধ্যে মাত্র ২৬ লাখ ৬৫ হাজারের কাছে এমআরপি পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.