নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা শুরু

Tourism-fair20160408205754রাজধানীতে নানা আয়োজনে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী আর্ন্তজাতিক পর্যটন মেলা।

শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি।

ভ্রমণবিষয়ক পাক্ষিক দ্য বাংলাদেশ মনিটর ত্রয়োদশবারের মতো এ মেলার আয়োজন করছে। মেলা আয়োজনে পার্টনার হিসেবে সহায়তা করছে- বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মেলায় টাইটেল স্পন্সর বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- রাশেদ খান মেনন, আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও দ্য বাংলাদেশ মনিটর’র সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’র বিপণন মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আহসান হোসেন কাজী, ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক দাতো দলজিৎ সিং, অথোরিটি অব থাইল্যান্ড’র পরিচালক ইসরা স্টাপানাসেথ, নেপাল পর্যটন করপোরেশন ও মিয়ানমার পর্যটনের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশ হাজার বছর ধরে আকর্ষণের স্থান। ইবনে বতুতা, হিয়েন সাংদের মতো বিশ্বখ্যাত পর্যটকরা এখানে এসেছেন। মাঝে ইতিহাসের পরিক্রমায় ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাস, দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্রের দেশে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ আবার অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বাবাসীর আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। অনেক দেশের নাম-ইতিহাস আমরা জানি না, সেসব দেশের পর্যটকরাও এখানে আসছেন। আমাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে প্রথমে নিজে এসে, পরে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে দলবেধে এদেশে ভ্রমণে আসছেন।

মন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে জিডিপি’তে পর্যটন খাতের অবদান মাত্র ২ শতাংশেরও কম। আমরা ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছি। কিন্তু বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম। অর্থ মন্ত্রণালয় ক্যাম্পেইনের টাকাটা পর্যন্ত ছাড় করেনি। তারা হয়তো বোঝেও না অর্থ ছাড়া ক্যাম্পেইন হয় না।

তিনি বলেন, সীমিত সম্পদের মধ্যে আমরা কক্সবাজারকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যটনের পরিকল্পনা সাজিয়েছি। সাবরাংয়ে বিদেশিদের জন্য বিশেষায়িত জোন করা হচ্ছে। কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ শুরু হচ্ছে। ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ এ বছরই শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক চার লেন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। আমাদের সেকেন্ড গন্তব্য সুন্দরবন। সেখানে ইকো ট্যুরিজমের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় গন্তব্য হিসেবে পাহাড়কে বেছে নেওয়া হয়েছে।

মেনন বলেন, বেসরকারি খাতে সিলেট অঞ্চলে বিশ্বমানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। সরকারের কাজ কেবল তাদের যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করা।

তিনি জানান, বুদ্ধিস্ট সার্কিট দেশের পর্যটনে সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশে ৫৫০টির মতো বুদ্ধিস্ট পুরাকৃতি ও স্থাপনা রয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে আমরা ১০ লাখ ইনবাউন্ড ট্যুরিস্টের আশা করছি।

কাজী ওয়াহিদুল আলম তার বক্তব্যে বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত বিকাশে সহায়তার লক্ষ্য নিয়ে ১৩ বছর আগে আমরা ঢাকা ট্রাভেল মার্ট আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বিগত বছরগুলোতে পর্যটন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ পর্যটনে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যাতে আমরা কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরেছি বলে মনে করি।

তিনি বলেন, দেশে একটি টেকসই পর্যটন খাত সৃষ্টি করতে হলে বর্ধিত সংখ্যায় বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করা জরুরি। এজন্য অনেক কিছুই করতে হবে। সর্বপ্রথমে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে কোন পর্যটন ক্ষেত্রটি আমরা বিশ্ববাজারে তুলে ধরব এবং কীভাবে তুলে ধরব। এর পাশাপাশি যোগাযোগসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার (৯ এপ্রিল) সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশে মাইস ট্যুরিজম’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মতলুব আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন।

ট্যুরিজম মালয়েশিয়া এবং ট্যুরিজম অথোরিটি অব থাইল্যান্ড মেলা উপলক্ষে বিটুবি মিটিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে। ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল সাংস্কৃতিক দলসহ মেলায় যোগ দিচ্ছে।

স্বাগতিক বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৫০টির বেশি সংস্থা মেলায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পর্যটন সংস্থা, বিমান সংস্থা, ট্রাভেল ও ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও রিসোর্ট, পর্যটন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য। অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলো মেলা চলাকালে দর্শনার্থীদের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে বিমান টিকেট, আকর্ষণীয় ট্যুর প্যাকেজসহ বিভিন্ন সেবা উপস্থাপন করবে।

শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা এবং শনি থেকে সোমবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২৫ টাকা। প্রবেশ কুপনের ওপর মেলার শেষদিন (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। র‌্যাফল ড্র বিজয়ীদের জন্য রয়েছে- দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যের এয়ার টিকেট, ট্যুর প্যাকেজ, তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন, লাঞ্চ ও ডিনার কুপনসহ বিভিন্ন পুরস্কার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.