এভিয়েশন নিউজ: শুধু বাংলাদেশেই নয় দেশের বাইরে ৪ টি দেশে উড়ান বন্ধের কারণে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এক হাজারের বেশি যাত্রী আটকা পড়েছেন। এসব যাত্রী সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্যে বিমানবন্দরে দিন কাটাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, আগামী এক মাসের মধ্যে যারা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের টিকিট কিনেছেন তাদের যাত্রাও অনিশ্চিত-এমনটাই বলছেন এয়ারওয়েজ সংশ্লিষ্টরা। যদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পুনরায় চালু না হয় তাহলে টিকিটের অর্থ ফেরত পাবেন কিনা তাও নিশ্চিত নয়।
বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ আন্তর্জাতিক রুটগুলোর মধ্যে ঢাকা-মাস্কাট, ঢাকা-দোহা, ঢাকা-জেদ্দা ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সব কয়টি গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অর্থ সংকটের কারণে জ্বালানি কিনতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয় বলে ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। সোমবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর পদত্যাগের জের ধরে এয়ারলাইন্সে চরম অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হয়।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ফ্লাইট অপারেশন পরিচালক ক্যাপ্টেন এম ইলিয়াস বলেন, এয়ারলাইন্সের নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কেউই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না, এমনকি আমরাও তাদের যোগাযোগ করে পাচ্ছি না। তাই এসব যাত্রীর জন্য আমরা কিছুই করতে পারছি না। কারণ ফ্লাইট নিয়ে যাওয়ার মতো তেল কেনার অর্থ আমাদের কাছে নেই।’
আন্তর্জাতিক রুট ছাড়াও অভ্যন্তরীণ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-যশোর, ঢাকা-সৈয়দপুর-রাজশাহী রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। বৃহস্পতিবার সব উড়ান বন্ধ হয়ে গেলেও তার আগে বুধবার থেকেই ফ্লাইট শিডিউলে বিপর্যয় দেখা দেয়। এ কারণে বুধবার থেকেই বিমানবন্দরে ইউনাইটেডের যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় কর্মীরা যাত্রীদের তোপের মুখে পড়েন। যাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে কর্মকর্তাদের অনেকেই বিমানবন্দর থেকে পালিয়েছেন।
এরপর গত বুধবার সন্ধ্যায় উত্তরায় এয়ারওয়েজের প্রধান কার্যালয়ে জরুরিভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এয়ারওয়েজ কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার থেকে সব ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দেন। সোমবার নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান মাহতাবুর রহমান। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া শাহীনুর আলম এখনো কাজে যোগ দেননি। এ কারণে এয়ারওয়েজের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব কর্মীর মধ্যে আরো বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দু’টি কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকল ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণার পর কাউন্টারগুলো বন্ধ করে দেয় কর্মকর্তারা। সেই থেকে এখনও বন্ধই রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের দু’টি কাউন্টারে ইউনাইটেডের কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি। পাশাপাশি ইউনাইটেডের কাউন্টারে দেওয়া তিনটি নম্বর-ই বন্ধ রয়েছে। এদিকে কাউন্টার বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রী হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দু’টি কাউন্টারে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। অভ্যন্তরীণ কাউন্টারে শুধু একটি সাদা কাগজে লিখা আছে, ‘ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সকল ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করা হল’। এটি ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। একই কাগজে লিখা রয়েছে, ‘যদি কেউ কাউন্টারে আসেন তবে নিচের নম্বরে যোগাযোগ করবেন’।
কিন্তু কার্যত তা বন্ধ রয়েছে। একাধিকবার সেই তিনটি নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। ওমানের রাজধানী মাস্কটগামী যাত্রী ফরিদ আকন্দের বুধবার রাতে ফ্লাইট ছিল। তিনি ফ্লাইট পাওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমানবন্দরে অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে অসহায় হয়ে তিনি নিজ বাড়ি কুমিল্লায় ফিরে যান। ফরিদ আকন্দ বলেন, তিনি যেতে পারবেন কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।
দোহাগামী যাত্রী ইদ্রিস বলেন, বুধবার রাতে তার ফ্লাইট ছিল। কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। কিভাবে তিনি যাবেন তাও জানেন না। ব্যয়ভার সংকুলান না হওয়া ও অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সকল রুটের ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই কাউন্টার বন্ধ করে দিয়ে উধাও হয়ে যান কাউন্টারের কর্মীরা। এ ঘোষণার পর রাতে ২ শতাধিক যাত্রী বেকায়দায় পড়েন। তারা রাতে বিমানবন্দরে বিক্ষোভও করেন। পরে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সকাল থেকে কোনো সমস্যা হয়নি। কাউন্টার বন্ধই রয়েছে। আমরা এখনো ইউনাইটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। কাউন্টারে দেওয়া সবগুলো নম্বর-ই বন্ধ রয়েছে।