গ্রাহক হারিয়েছে বিমানের ক্যাটারিং সেবা

Biman-bangladeshএভিয়েশন নিউজ: গ্রাহক হারিয়েছে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ক্যাটারিং সেবা। একসময় দেশী-বিদেশী অনেক উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার (বিএফসিসি) থেকে খাবার নিলেও বর্তমানে গ্রাহক কেবল বিমানই। মূলত বৈচিত্র্যের অভাব ও মানহীন খাবারের কারণে লাভজনক ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা হারিয়েছে বিমান। পাশাপাশি অন্যান্য রেস্টুরেন্টের সঙ্গে বিএফসিসি কর্মকর্তাদের যোগসাজশও গ্রাহক হারানোর অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা যায়, খাবারের মান খারাপ হওয়ায় ২০১২ সালের ২২ মে বিএফসিসির খাবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সাউদিয়া এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। একই বছরের ১২ জুন খাবার নেয়ার চুক্তি বাতিল করে সাউদিয়া এয়ারলাইনস। এ চুক্তি বাতিলের ফলে বছরে ১২ কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয় বিএফসিসি। সাউদিয়া এয়ারলাইনসের একাধিক যাত্রী বিএফসিসির খাবার খেয়ে মানের বিষয়ে অভিযোগ দেয়ায় বিষয়টি আলোচনায় আসে।

এর আগে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইনস, ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস, ভুটানের ড্রুক এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের মতো খ্যাতনামা এয়ারলাইনসগুলোও বিএফসিসি থেকে খাবার নিত। তবে মান খারাপ হওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সময় এসব ক্যারিয়ারও বিএফসিসি থেকে খাবার নেয়া বন্ধ করে দেয়।

সর্বশেষ গত জুলাইয়ে বিএফসিসি থেকে খাবার নেয়া বন্ধ করে দেয় বেসরকারি এয়ারলাইনস রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসও নিজস্ব ব্যবস্থায় যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করেছে।

বিএফসিসি থেকে খাবার নেয়া বন্ধ করা প্রসঙ্গে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের এক কর্মকর্তা জানান, বিএফসিসি বিমানবন্দরের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় সেখান থেকে খাবার পরিবহন সহজ হয়। কিন্তু খরচ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় বিএফসিসি থেকে খাবার নেয়া বন্ধ করেছে রিজেন্ট।

অভিযোগ রয়েছে, বিএফসিসি, বিমান প্রশাসন ও বিভিন্ন দেশের স্টেশন কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের কারণে বিমানের ক্যাটারিং সেবার উন্নয়ন হচ্ছে না। এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে বিমানের বিভিন্ন রুটের ফ্লাইটে খাবার পরিবেশনের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিমানের বিভিন্ন রুটের ফ্লাইটে খাবার পরিবেশনের নামে প্রতি বছর এ শাখায় লুটপাট হচ্ছে গড়ে ৪০-৫০ কোটি টাকা। সংস্থাটি একদিকে যাত্রীদের জন্য তৈরি করছে মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার, অন্যদিকে অতিরিক্ত খাবার সরবরাহ করার নামে লোপাট করছে কোটি কোটি টাকা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম ও ঢাকার কয়েকজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসাটি তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য বিএফসিসির এ সিন্ডিকেট লুটপাট করে চলেছে। তিনি বলেন, বিএফসিসি বিমানের ফ্লাইটপ্রতি যাত্রীদের খাবারের জন্য অতিরিক্ত টাকা নিলেও ফ্লাইটে ঠিকমতো খাবার পান না যাত্রীরা। গত বছর বিমানের লন্ডনগামী একটি ফ্লাইটে যাত্রীদের জন্য কোনো খাবার ছিল না। ওই ফ্লাইটে যাত্রী ছিল ৭০ জন। ওইদিন বিএফসিসি থেকে নির্ধারিত খাবারের বাইরে আরো ৮০টি অতিরিক্ত খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। খাবার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন যাত্রীরা। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে কেবিন ক্রুদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিএফসিসির খাবারের মান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্য ও বেলারুশ সফর শেষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে তিনি এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সে সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানকে তিনি বলেন, ফ্লাইটে খাবার-দাবারও আগের মতোই। বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে শিশুদের জন্য খেলনার ব্যবস্থা রাখা হলেও বিমানে সে ব্যবস্থা না থাকায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের জন্য কোনো খেলনার ব্যবস্থাও নেই।

এদিকে গত ১৫ জুলাই প্রকাশিত স্কাইট্র্যাক্সের রেটিংয়েও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দুই তারকা সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; যা স্কাইট্র্যাক্সের বিবেচনায় পুওর বা নিম্নমানের। তিন বছর ধরে এ মানের তালিকায় রয়েছে বিমান। মূলত সার্বিক গ্রাহকসেবাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিম্নমানের হওয়ায় এ অবস্থায় রয়েছে বিমান। স্কাইট্র্যাক্সে দেয়া গ্রাহকের অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমানের ইকোনমি ও বিজনেস শ্রেণীর সুযোগ-সুবিধার মধ্যে তেমন কেনো পার্থক্য নেই। ফ্লাইটে সরবরাহ করা খাবারের মান নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে; যা বিএফসিসি থেকে নেয় বিমান।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.