এভিয়েশন নিউজ: সোনা চোরাচালান মামলায় গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দিতে নাম আসার পর বিমানের ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল পদত্যাগ করলেও প্রায় এক মাসেও তার পদত্যাগ পত্র গ্রহন করেনি বিমান মানেজমেন্ট।
জানা গেছে গ্রেফতারকৃদের জবানবন্দিতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) মোসাদ্দিক আহম্মেদ ও পরিচালক (প্রশাসন) রাজপতি সরকারের নামও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শামীম নজরুলের পদত্যাগপত্র গ্রহন করলে এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকেও পদত্যাগ করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে মুলত একারণেই ম্যানেজমেন্ট শামীম নজরুলের পদত্যাগ পত্র গ্রহন করছে না।
উল্টো তাকে ভারপ্রাপ্ত ডিএফও‘র (ফ্লাইট অপারেশন) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই অবস্থায় বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ (বেবিচক) ও ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সিভিল এভিয়েশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিমানের মতো একটি রাস্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানের দুটি গুরুত্বপুর্ণ বিভাগের শীর্ষ পদে একজন পদত্যাগী কর্মকর্তার স্বাক্ষরে গত ২৬ দিন ধরে নানা কাজ হচ্ছে।
তার নেতৃত্বে বৈঠক হচ্ছে। নানা স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। যা সম্পুর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে আইকাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেও সিভিল এভিয়েশন সুত্রে জানাগেছে। আইকাও থেকে বলা হয়েছে সোনা চোরাচালান মামলার গ্রেফতারকৃত আসামীদের জবানবন্দিতে শামীম নজরুলের নাম আসায় তাকে অবিলম্বে ট্রেনিং বিভাগ থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত। কিন্তু বিমান সেটা করছে না।
এমনকি সোনা চোরাচালানের সঙ্গে শামীম নজরুলের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই এ বিষয়ে বিমান ম্যানেজমেন্ট থেকে লিখিথভাবেও সিভিল এভিয়েশনকে কিছু জানাচ্ছে না। ম্যানেজমেন্ট থেকে গত ২০দিনেও এ বিষয়ে কোন কিছু জানানো হয়নি। উল্টো অভিযুক্ত কর্মকর্তা শামীম নজরুলকে দিয়ে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে গুরুত্বপুর্ণ বৈঠক করানো হচ্ছে।
জানাগেছে গত ১০ ডিসেম্বর শামীম নজরুল তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিমানের পরিচালক প্রশাসন রাজপতি সরকার জানান পদত্যাগের পরদিনই শামীমের পদত্যাগপত্র প্রশাসন বিভাগে আসে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ওই দিন থেকে তিনি আর তার পদে থাকার কথা নয়। কিন্তু এরপরও তিনি ডিপুটি চীফ হিসাবে কিভাবে বিভিন্ন বৈঠক করছেন এবং চিঠিপত্রে স্বাক্ষর করছেন এ প্রশ্নে কোন উত্তর দিতে পারেননি রাজপতি সরকার।
অভিযোগ আছে শামীম নজরুল বিমানের চেয়ারম্যানের কথিত ধর্মপুত্র মাহমুদুল হক ওরফে পলাশের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত। ঘন্টার পর ঘন্টা শামীমের কক্ষে আড্ডা দিতেন গ্রেফতারকুত পলাশ। শামীম বিভিন্ন সময় পলাশকে নিয়ে বিমানের বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্র জানিয়েছে, সোনা চোরাচালান মামলায় দোষ স্বীকার করে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পলাশ সহযোগী হিসেবে শামীমের নামও বলেছেন। তিনি বলেন, জবানবন্দিতে বিমানের এমডি মোসাদ্দেক আহম্মেদ, পরিচালক প্রশাসন রাজপতি সরকারসহ কয়েকজন বৈমানিকের যে নাম এসেছে সেগুলো তারা খতিয়ে দেখেছেন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
গত ১৯ নভেম্বর ঢাকার হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালানে জড়িত অভিযোগে বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক এমদাদ হোসেন, প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং শাখার প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, শিডিউল ম্যানেজার তোজাম্মেল হোসেন, পলাশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাঁরা ২৪ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
ডিবি সূত্র জানায়, ওই পাঁচজনের মধ্যে পলাশ চোরাচালান চক্রের অন্যতম প্রধান। তিনি নিজেকে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ধর্মপুত্র পরিচয় দিতেন। তাঁর জবানবন্দিতে সোনা চোরাচালানে সহায়তাকারী হিসেবে শামীম নজরুল ও বিমানের ফ্লাইট পরিচালন শাখার সাবেক একজন পরিচালকের নাম বলেছেন।
বিমানের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শামীম নজরুলও বিমানের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। পলাশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের সময় শামীম নজরুল দেশে ছিলেন না। তখন তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ডিবি খুঁজছিল। পরে দেশে ফিরে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে নির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
রাজপতি সরকার বলেন, শামীম নজরুল পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন। শুল্ক বিভাগের করা সোনা চোরাচালানের ওই মামলা তদন্ত করছে ডিবি। ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, আসামিদের জবানবন্দিতে শামীম নজরুলের নাম এসেছে। তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।