ভুয়া তথ্যে ভিসা আবেদন বাড়ছে

indexভুয়া তথ্য দিয়ে ভিসা আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে বিভিন্ন দেশের ঢাকাস্থ দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোয়। ভুয়া বাবা, বোন, স্বামীসহ অন্যান্য আত্মীয় দেখিয়ে বিদেশী বিভিন্ন মিশনে ভিসার জন্য আবেদন করছেন বাংলাদেশীরা। এ অবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছে জার্মানি, চীন, ইতালি, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

জানা গেছে, বাংলাদেশীদের ভিসা আবেদন যাচাই করতে গিয়ে প্রায়ই ভুয়া তথ্যের সন্ধান পাচ্ছে বিদেশী মিশনগুলো। অনেকেই প্রবাসে বসবাসরত অন্য কোনো বাংলাদেশীকে নিজের নিকটাত্মীয় বলে আবেদনে উল্লেখ করছেন, যদিও প্রকৃতপক্ষে তিনি তার আত্মীয় নন। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে কিংবা আবেদনকারীর তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে অসংলগ্ন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সংশ্লিষ্ট মিশন কর্মকর্তারা।

রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতি মাসে এ রকম অভিযোগ জমা পড়ে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। গুলশান থানার এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিভিন্ন দূতাবাস থেকে প্রতি মাসেই আট থেকে ১৫টি অভিযোগ পেয়ে থাকি। গড়ে প্রতি মাসে ১০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়ে, আগে যা কম ছিল। এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জার্মানি, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি দেশের ভিসাপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা হওয়ায় সেগুলোকে দুদকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারাই মূলত এগুলো পরিচালনা করে থাকে।
ভুয়া তথ্যে ইতালির ভিসার জন্য আবেদনকারী এক বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় দুই নারী ও পুরুষ প্রার্থী ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী এক বাংলাদেশীকে তাদের পিতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভ্রমণ ভিসার আবেদন করে। দূতাবাসের সন্দেহ হলে তারা বিষয়টিতে অনুসন্ধান চালিয়ে তথ্য পায় যে, এ দুজনের সঙ্গে ওই প্রবাসী বাংলাদেশীর কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া এরা দুজন ভাই-বোন কিনা, তা নিয়েও দূতাবাস সন্দেহ প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাস আমাদের কাছে প্রতারণার অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখি এবং এতে ভুয়া তথ্যের বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় ওই দুই বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হয়েছে।

শুধু ইতালি নয়; জার্মানি, চীন ও সৌদি আরবের দূতাবাস থেকেও প্রায়ই এ ধরনের ভুয়া তথ্য দেয়ার অভিযোগ জমা পড়ছে সংশ্লিষ্ট থানায়।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসসহ বিভিন্ন দূতাবাসের এ ধরনের অভিযোগগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই মামলায় পরিণত হয়েছে। মামলাগুলো আমরা দুদকে পাঠিয়ে দিয়েছি। কেননা প্রতারণার মামলা তদারক করার এখতিয়ার এখনো পুলিশের কাছে আসেনি। এ নিয়ে সংসদে পাস হওয়া নতুন আইনটি গেজেট আকারে আমাদের কাছে আসার পরই এসব মামলা আমরা পরিচালনা করতে পারব।

উল্লেখ্য, প্রতারণা ও জালিয়াতি মামলার তদন্তভার আবার পুলিশের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে গত মাসেই জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১৬। ফলে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর আলোকে পুলিশ এখন আগের মতোই প্রতারণার অপরাধ তদন্ত করতে পারবে। এ আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার হবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায়ই ঢাকাস্থ বিদেশী মিশনের কূটনীতিকরা বিষয়গুলো আমাদের অবহিত করেন। এগুলো আমাদের জন্য বিব্রতকর। আগে এককভাবে এ ধরনের অভিযোগ কম থাকলেও বর্তমানে এর সংখ্যা বাড়ছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে প্রতারণাগুলো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের মূল শঙ্কার বিষয়। প্রায়ই বিভিন্ন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ভিসা পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এখানেও ভিসাপ্রার্থীরা প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ভিসার জন্য ভুয়া তথ্য দিয়ে আবেদন করেন এবং প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তবে বিষয়গুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খতিয়ে দেখছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.