বাংলাদেশের ৬৭টি কার্যালয় থেকে গত আটদিনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক। কিন্তু সার্ভার ত্রুটির কারণে কোনো পাসপোর্টের ভ্যাকেন্ট ভেরিফিকেশন (ফিঙ্গার প্রিন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই) করতে পারেনি প্রধান কার্যালয়। এতে সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মুমূর্ষু রোগী ও বিদেশগামীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান বলেন, সার্ভার কিছুটা ধীরগতি হয়ে পড়েছে। তাই যারা জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে আসছেন, তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। অন্য সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট হচ্ছে। মূলত সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে লক্ষ্য করে যারা পাসপোর্ট করতে আসছেন, তাদের কারণে চাপ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার দেশের বিভাগীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে পাঠানো পাসপোর্টের ফরমগুলোর ভ্যাকেন্ট ভেরিফিকেশন করা যাচ্ছে না। ফলে প্রিন্ট করা যাচ্ছে না আবেদনকৃত পাসপোর্টগুলো। এতে ভোগান্তি বাড়ছে বিদেশগামী প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও মুমূর্ষু রোগীদের।
পাসপোর্ট ভোগান্তি নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আরিফুর রহমানের সঙ্গে। একটি রিক্রুটিং এজেন্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক ভিসা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় তার। কিন্তু আবেদনের ২০ দিন পরও পাসপোর্ট না পাওয়ায় সে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
এছাড়া ক্যান্সারে আক্রান্ত চট্টগ্রামের একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী নাশিদ নিয়াজ মুনিয়া চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুর যেতে ১৯ জুন জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্টের আবেদন করেন। কিন্তু এখনো পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় চিকিত্সার বিলম্বে দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে তার।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ বলেন, আটদিন ধরে পাঠানো কোনো পাসপোর্ট আমরা পাইনি। এতে অনেক প্রবাসী তাদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যার কথা বলছেন। কিন্তু আমরা কিছু করতে পারছি না। তবে পুনম ও মুনিয়া নামে দুজন চিকিত্সার জন্য জরুরি পাসপোর্টের আবেদন করেন। মানবিক বিবেচনায় প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে তাদের পাসপোর্ট দুটি ভ্যাকেন্ট ভেরিফিকেশন ছাড়াই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আরো অনেকেই জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট চাইলেও আমরা তা দিতে পারছি না।
গত ছয় কার্যদিবসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসে পাসপোর্টের আবেদন করেছেন প্রায় ২ হাজার ৩০০ জন। এর মধ্যে একটি পাসপোর্টও প্রিন্ট হয়নি বলে জানায় বিভাগীয় কার্যালয়। এ বিষয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের (চট্টগ্রাম) পরিচালক আবু সাইদের কাছে জানতে চাইলে তিনিও সার্ভারের ত্রুটির কথা বলেন।
জানা যায়, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অধীনে পাঁচটি বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস রয়েছে। বিভাগীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয় মিলে সারা দেশে মোট ৬৭টি কার্যালয় থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়ন হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো থেকে পাঁচ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের আবেদন করা হয়। সেই হিসাবে, গত ছয় কার্যদিবসে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ফরম জমা হয়েছে আগারগাঁও কার্যালয়ে। কিন্তু সার্ভারে ত্রুটির কারণে আটকে আছে সব আবেদন।
এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী আবু নাছের মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, ভ্যাকেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য যেসব সার্ভার ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তা পুরনো। বর্তমানে পাসপোর্ট আবেদনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্ভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। এতে গত বুধবার থেকে সার্ভারে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। তবে এর আগে কখনো এ রকম দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি হয়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আরও খবর