স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বসম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বাংলাদেশ নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকায় থাকবে, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন। বিশ্বসম্প্রদায়ের উদ্দেশে একে অন্যকে সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়েরও আহ্বান জানান। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে গতকাল ‘‌ন্যাশনাল কনফারেন্স অন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি প্যানেল ডিসকাশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।

প্রথম সুপারিশে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন আমরা একে অন্যকে সাহায্য করি এবং আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতিগুলোর জন্য বর্ধিত প্রস্তুতি ও সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য আমাদের কর্মকাণ্ডগুলোকে আরো সমন্বয় করতে হবে।’ দ্বিতীয় ও তৃতীয় সুপারিশে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ নির্মূল করতে একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেন এবং ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের বোঝা মোকাবেলায় অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময়ের পরামর্শ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের মূলধারার দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। সেই সঙ্গে ডুবে যাওয়া ও দুর্ঘটনার মতো মারাত্মক জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিতেও উচিত সহযোগিতা করা।’

চতুর্থত, শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিকিৎসাশিক্ষা ও গবেষণার জন্য আমাদের সম্মিলিত সুযোগ-সুবিধাগুলোকে একত্র করতে হবে, বিশেষ করে জলবায়ু প্রভাবের কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের মোকাবেলায় বিশেষ মনোযোগ দেয়া জরুরি।’ চূড়ান্ত সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকে এসডিজি-৩-এর সঙ্গে আমাদের অর্জনের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যার লক্ষ্য সমগ্র অঞ্চলজুড়ে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কাভারেজ প্রচার।’

বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করেছিল বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় আট হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করি। আরো আড়াই হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে আমাদের স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। এতে গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। ২০০৯ সালে আবারো ক্ষমতায় এসে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করি। সে সময় সব মিলিয়ে সাড়ে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়। বর্তমানে সেগুলো থেকে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে জাতিসংঘ আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। একই সঙ্গে এ উদ্ভাবনী চিন্তাকে বিশ্বের সব দেশকে অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য অর্জন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন-২০১৮ পাস করেছি। শ্রমজীবী মানুষকে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। চার মাসের বেতন-ভাতাসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণকে উন্নত সেবা দেয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল।’ মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭৩ বছর জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর। বর্তমানে তা বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। আমরা ৯৭ শতাংশ মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পৌঁছে দিয়েছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে দক্ষ ধাত্রী দিয়ে প্রসবসেবা দেয়া হচ্ছে। বাল্যবিবাহ নিরোধের ব্যবস্থা নিয়েছি। বাল্যবিবাহ যাতে কম হয়, সেজন্য জনসচেতনতা তৈরি করছি এবং মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মিয়ানমারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. থেতখাইং উইন, ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী লিয়নপো দাশো দেচেন ওয়াংমো, মালদ্বীপের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সাফিয়া মোহাম্মদ সাইদ, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রী বিজয়ভাত ইসরাভাকদি ও বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. বরদান জং রানা বক্তব্য দেন। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এবং সূচনা বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.